বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অযথা বিলম্ব না করে অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘দেখা যাচ্ছে, যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি তত জটিল হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে যারা গণতন্ত্র ও নিপীড়ন মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার জন্য বিশ্বাসী নয়, তারা আবারো জোট গঠনের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করছে।’’
শনিবার (১৯ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে ‘গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ’ শীর্ষক আলোচনাসভায় ফখরুল এসব মন্তব্য করেন। এই আলোচনার আয়োজন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, যার অংশীদার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘সরকারকে দ্রুত সমস্যা সনাক্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানাই। এরপরই দেশের সামনে আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া উচিত। এটাই একমাত্র উপযুক্ত পথ।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু দুঃখজনক যে, দিন দিন পরিস্থিতি আরও বিবর্তিত ও জটিল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তি যারা গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অগ্রগতিতে বিশ্বাস করে না, তারা আবারো সংগঠিত হচ্ছে ও ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে।’’
ফখরুল দেশের পরিবেশে ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকা দুর্নীতি, হত্যা, ছিনতাই এবং গুমের মতো ভয়াবহ ঘটনাগুলো নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি যোগ করেন, ‘‘আমাদের সামনে থাকা সুযোগ হারিয়ে ফেললে বাংলাদেশ অনেক দূর পেছিয়ে যাবে। প্রতিবারই জনগণ ও যুবক প্রান দেওয়ার বিনিময়ে একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে, আর আমাদের দায়িত্বহীনতার জন্য সেই সুযোগ হাতছাড়া হতে দেওয়া যায় না।’’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘জলদি সংস্কার, জুলাই সনদ ও দ্রুত নির্বাচন—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে রেখে এগোনো প্রয়োজন। দেশের মঙ্গলেই এটি জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এই দায়িত্ব অর্পিত। কিন্তু যত দেরি হচ্ছে, পরিস্থিতি ততই জটিল হচ্ছে। এর ফলে যারা গণতন্ত্রকে অবমূল্যায়ন করতে চায় তারাও সক্রিয় হচ্ছে।’’
তিনি যোগ করেন, ‘‘আমরা আশাবাদী যে অন্তর্বর্তী সরকারের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনে সফল হবেন।’’
ফখরুল বলেন, ‘‘বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচনের মাধ্যমে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়তে চায়। অতীতে আমরা যত বাধার মোকাবিলা করেছি, ভবিষ্যতেও সেসব বাধা আমাদের থামাতে পারবে না।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আমাদের মূল আদর্শ এবং এ বিষয়ে কোনো আপস নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা আলোচনা, সহনশীলতা ও ভিন্নমতের স্বীকৃতির মাধ্যমে এমন এক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটাবে।’’
আলোচনাসভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।