বাংলাদেশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আবারও পূর্ণ স্বীকৃতি ও সদস্যপদ দেওয়ার
আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ফিলিস্তিন প্রশ্নের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক
সমাধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পররাষ্ট্র
উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন এখনই শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন,
মানবাধিকার আইন ও জাতিসংঘ সনদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের একসঙ্গে সাহসিকতা ও
দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ইতিহাসের সঠিক পক্ষে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার হোক আমাদের
সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।’
গাজা পুনর্গঠনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে যেকোনো উদ্যোগে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের
প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ মানবিক সহায়তা ও ভবিষ্যৎ
পুনর্গঠন পরিকল্পনায় কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত।
সৌদি আরব ও ফ্রান্সকে সম্মেলনের আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সময়ে
ফিলিস্তিনে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্য ও দ্রুততার প্রয়োজন ছিল। আট
সদস্যের ওয়ার্কিং গ্রুপের নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার প্রশংসনীয়।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে
রাজধানী করে একটি টেকসই ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে অটল অবস্থানে
রয়েছে।
‘আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনের জন্য ন্যায়বিচার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি সম্ভব
নয়। আর এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান, যা
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবনাগুলোর
ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত,’ বলেন তৌহিদ হোসেন।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ‘গ্লোবাল এলায়েন্স ফর দ্য ইমপ্লিমেনটেশন ফর দ্য টু- স্টেইট
সলিউশন’— এর উদ্যোগকে জোরালোভাবে সমর্থন করে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এই ঐকমত্যকে এখন বাস্তব রূপ দিতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের
দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের জন্য একটি স্পষ্ট ও সংযুক্ত
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের
বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
উপদেষ্টা বলেন, ‘স্কুল, হাসপাতাল ও ত্রাণ শিবিরগুলো হামলার শিকার হয়েছে। গাজার
ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে রয়েছে অসংখ্য লাশ। আমরা নিঃসন্দেহে আমাদের সময়ের অন্যতম
ভয়াবহ গণহত্যার সাক্ষী হচ্ছি। বাংলাদেশ গাজায় চলমান এই গণহত্যাকে ঘৃণাভরে নিন্দা
জানাচ্ছে এবং দোষীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের যে পন্থা ইসরায়েল গ্রহণ করেছে, তা
একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
মানবিক সংকট মোকাবিলা ও গাজা পুনর্গঠনের জন্য নতুন সম্পদ ও অর্থায়ন ব্যবস্থা গড়ে
তোলার উপর জোর দিয়ে তিনি আরব-ইসলামিক পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান।