ঢাকা | রবিবার | ৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন: সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতি সে লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে নির্বাচন কমিশন।

শনিবার বিকেলে রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তরে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের সকল কার্যক্রম সুসমন্বিতভাবে পরিচালনা করতে বিভাগীয় প্রশাসন ও ইলেকশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রগুলোতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা বা গোলযোগের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট আসনের নির্বাচন স্থগিত করা হবে। আমাদের কাছে কোন ধরনের গন্ডগোল সহ্যযোগ্য নয়।’’

সিইসি আরও জানান, ‘‘যারা নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করবে তাদের মধ্যে অনিয়ম, দুর্নীতি বা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ কঠোরভাবে বিবেচনা করে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। গত নির্বাচনে যারা প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

তিনি বঙ্গবন্ধুর এ পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘জনমনে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।’’ তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন এখনও নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেনি; তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কমপক্ষে দুই মাস আগে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি স্বল্প সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার প্রস্তুতিও গ্রহণ করা হচ্ছে।

সোমবার সকালে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা মিলিতভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোটে অংশগ্রহণে উৎসাহিত হয় এবং নির্বাচনের প্রতি আস্থা ফিরে পায়।’’

বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলেও তিনি বলেন, ‘‘অর্থাৎ আমরা চাই এই অবস্থার উন্নতি হোক, যাতে মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে।’’ তবে ভোটারদের এক ধরনের নিস্ক্রিয়তা ও উদাসীনতা রয়ে গেছে, যারা ভোটে যাবার পরিবর্তে বাসায় থেকেই আরাম পছন্দ করেন। মানুষদের মধ্যে এমন মনোভাব তৈরি হয়েছে যে, ‘আমার ভোট তো কাউকে না কাউকে দিয়ে দেওয়া হবে।’ এই মানসিকতা দূর করাই কমিশনের বড় দায়িত্ব বলে উল্লেখ করেন সিইসি। এই লক্ষ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাংবাদিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকার কথাও তিনি বলেন এবং সহযোগিতার আহ্বান জানান।

বিশেষ করে তিনি আসন্ন নির্বাচনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার থেকে সৃষ্ট বিভ্রান্তির বিষয়ে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, ‘‘এআই এখন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা চাই পেশাদার সাংবাদিকেরা আমাদের পাশে থেকে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করুন। কিন্তু যারা হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ভুল তথ্য ছড়ায়, তাদের নিয়ন্ত্রণ কঠোর করা হবে। কারণ এসব অবিচ্ছিন্ন মিথ্যা ভিডিও ও পোস্ট জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’’

সিইসি আরও জানান, যেসব প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রশাসনের কর্মীরা সংসদ নির্বাচনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, তাদের আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

তিনি পরিষ্কার করে বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন কোনও দল বা ব্যক্তির পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কাজ করে না; আমরা ১৮ কোটি মানুষের জন্য কাজ করি।’’ পাশাপাশি তিনি এআই প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো মিথ্যা তথ্য মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথাও উল্লেখ করেন।

সর্বশেষ নাগরিকদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘ভোট দেয়া শুধু একটা নাগরিক দায়িত্ব নয়, এটি ঈমানেরও দায়িত্ব। তাই সবাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে।’’