ঢাকা | শনিবার | ১৬ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বরিশালে মহিউদ্দিন রনি ও কাফিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) চিকিৎসক নার্স ও

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগে স্বাস্থ্যখাতের সংস্কার

আন্দোলনের সংগঠক ছাত্র মহিউদ্দির রনি ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফিসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে

থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) গভীর রাতে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জুয়েল চন্দ্র শীল

বাদী হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় এ অভিযোগ করেন। শুক্রবার বিকাল পৌঁনে চারটার দিকে এই

তথ্য নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর

রহমান। 

তিনি বলেন, অভিযোগে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৩০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন— আন্দোলনের প্রধান নেতা মহিউদ্দিন রনি (৩০), রাকিন (২৫), সুনান

(২৪), সিফাত (২৩), শামিম (২৫), আল মুসা (২৬), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক

নেত্রী সিফা (২২), হাসপাতালে অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থী দাইয়ান (২১),

কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফি (৩০), এইচ এম আবুল খায়ের (৫০), হাসপাতালের দালাল নুরুন

নাহার (৪০) ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর মো. সিয়াম ওরফে ন্যাভাই (৩৮)।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ আগষ্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় শের-ই-বাংলা

চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশের দাবিতে হাসপাতালের

গেটের সামনে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন

করে। 

এ সময় অভিযুক্তরা চাপাতি, লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি-সোটাসহ দেশীয়

অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর অতর্কিত

হামলা করে। এর মধ্যে মহিউদ্দিন রনি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিচ্ছন্নতা

কর্মী রফিকুল পাটোয়ারী মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে।

এ ছাড়া মামলায় ২-১১ নম্বরসহ অজ্ঞাত অভিযুক্তরা হত্যার উদ্দেশ্য হাতে থাকা চাপাতি,

লোহার রড, এসএস পাইপ, হকিস্টিক, লাঠি দিয়ে এলোপাথারি আঘাত করে। এতে অফিস সহায়ক

পারভেজের ডান হাতে, আয়া সেলিনার ডান হাতের কনুর উপরীভাগে, অফিস সহায়ক রাব্বির বাম

হাতের কব্জিতে এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী শামীসের ডান হাতে হাড় ভাঙা জখম হয়।

এ ছাড়াও তাদের হামলায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী হাসান, সাকিব, জাকারিয়া রুবেল, অফিস সহায়ক

ফয়সাল রাব্বি, আয়া সুমরত মন্ডল, লিফট অপারেটর শাকিলসহ মানবন্ধনে অংশ নেয়া

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আহত হন। 

এমনকি কর্মসূচিতে অংশ নেয়া নারী নার্স ও আয়াদের সেলোয়ার-কামিজ ছিড়ে শ্রীলতাহানী

ঘটানো হয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এই সময় পথচারী ও স্থানীয় লোকজন এসে অভিযুক্তদের কবল থেকে হাসপাতালের চিকিৎসক,

নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ওই স্থানে পুনরায়

মানববন্ধন করলে তাদের খুন-জখমের হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর

আহত ১১ জন কর্মচারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়।

এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন,

হাসপাতালের কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে

এ বিষয়ে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে কর্মচারীদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ উপপরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান শাহীনকে প্রধান করে গঠিত

কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর।

অপরদিকে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হামলার ঘটনা নিয়ে সদর রোড অশ্বিনী কুমার হল

চত্বরে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া

মহিউদ্দির রনি। 

তিনি অভিযোগ করেন হাসপাতালের কর্মচারীরা তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, শান্তিপূর্ণ

অনশন কর্মসূচিতে হামলা করেছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের উস্কানিতে এ হামলার ঘটনায় তাদের অনেক শিক্ষার্থী

আহত হয়েছে। এরপরও স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মহিউদ্দিন

রনি।