রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল হাটে বর্ষাকালে দেশি মাছের প্রচুর বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় শামীম মিয়া জানান, বর্ষাকালে আশেপাশের এলাকার মুক্ত জলাশয় থেকে টাটকা দেশি মাছ বাজারে আসে, যা কেনার জন্য তিনি নিয়মিত হাটে আসেন। অন্যদিকে, আবুল হোসেন বলেন, বর্ষার নতুন পানির জন্য নদী-নালা, বিল-হাওর ও খেত থেকে নানা প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যায়; যাদের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড় অন্যতম। এসব মাছ গ্রাম অঞ্চল থেকে উঠে রাজধানীসহ বড় শহরে পৌঁছে যায়।
শনিবার কায়েতপাড়া বাজারে নীলাস্বরের দোকানে টাটকা বড় আকৃতির পুঁটি মাছ প্রতি কেজিতে এক হাজার টাকায় পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ী আলো মিয়া খানিকটা দর-কষাকষির পর সাড়ে চার শত টাকায় আধা কেজি পুঁটি ও ছয়শো টাকায় আধা কেজি ট্যাংরা কিনেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বোয়াল মাছও কেজি প্রতি এক হাজার টাকায় ক্রয় করেন।
বর্ষায় দেশি মাছের চাহিদাও ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। গাউছিয়া তাতবাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি ও দুই হাজার তিনশো টাকায় ইলিশ মাছও ক্রয় করেছেন। মিঠু জানান, যদিও দাম বেশি, তবুও পরিবারের জন্য তাজা দেশি মাছ কেনা আনন্দের।
ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে একটি বড় রুই মাছ ১২ কেজি ওজনের পাওয়া গেছে, যার দাম ১৯ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া ৪ কেজি ওজনের চিতল ও ৬ কেজি আইড় মাছও বিক্রি হচ্ছিল। বাচ্চু মিয়া জানান, নদীর মাছ হওয়ায় এসব মাছ সবসময় পাওয়া যায় না, তাই দাম বেশি। পাশেই বসে থাকা মতিন সাত কেজি ওজনের বাগাড় মাছ সাত হাজার টাকায় বিক্রির চেষ্টা করছিলেন। বড় পরিবার যারা বড় মাপের মাছ পছন্দ করেন, তারা এসব মাছ কেনেন।
মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বাজার ও আকার অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। পুঁটির দাম ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা, ট্যাংরা ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০, বেলে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, বাইন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, মলা ৬০০, পিয়ালি ৬০০ থেকে ৭০০, গুলশা ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বাগাড় এক হাজার ও বড় রুই কেজি প্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, দেশে মোট মাছ উৎপাদনের ৫৯ শতাংশই চাষের মাছ। নদী, খাল, বিল, হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন মাত্র ১৫-১৭ শতাংশ। মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ ভালো হওয়ার কারণে সরবরাহ অল্প এবং চাহিদা বেশি, ফলে দামেরও পার্থক্য বেশি। বর্ষার নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে এসব এলাকার মাছের প্রজাতিও বৃদ্ধি পায়। মিঠাপানিতে প্রায় ২৬১ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় যেখানে বর্ষাকালে ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ দেখা যায়।
মুড়াপাড়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, টাকি, শোল, গজার, শিং ও মাগুরের মতো অসংখ্য ছোট মাছ নদীতে দেখা দেয়। বৃষ্টি শুরু হলে মাছেরা ডিম ছাড়ে এবং পোনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পায়।
মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। বর্তমানে রূপগঞ্জে মাছের অভয়াশ্রম খুবই কম, যেখানে নদী বা খাল-বিলের গভীর অংশে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, যা মাছের সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে এ ধরণের অভয়াশ্রম সংখ্যা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা চলছে।