ঢাকা | রবিবার | ২০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৫শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বর্ষায় রূপগঞ্জের হাটে জমজমাট দেশি মাছের বাজার

রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল হাটে বর্ষাকালে দেশি মাছের প্রচুর সরবরাহ দেখা যায়, যা স্থানীয় বাজারে মাছপ্রেমীদের আগমন বাড়িয়ে দিয়েছে। শামীম মিয়া জানান, বর্ষার সময় আশেপাশের এলাকা থেকে আসা দেশি মাছ কেনার জন্য তিনি এই হাটে আসেন, কারণ সারাবছর চাষের মাছ খাওয়া আর তেমন ভালো লাগে না। আবুল হোসেন মতি বলেন, নতুন পানির টাটকা মাছের স্বাদ এক অন্যরকম, যদিও দাম একটু বেশি হয়।

বর্ষাকালে নদী, নালা, খাল-বিল, খেত ও হাওর-বাঁওড়ে নতুন পানি আসায় মুক্ত জলাশয়ে পাওয়া যায় দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ বহু প্রজাতির মাছ। এসব মাছ গ্রামগঞ্জ থেকে রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে সরবরাহ করা হয়।

কায়েতপাড়া বাজারে দেখা যায়, নীলাস্বরের দোকানে পুঁটি, বোয়াল, ট্যাংরা সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পুটিগুলো টাটকা এবং বড় আকৃতির। দোকানদার প্রতি কেজি পুঁটির দাম এক হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছেন। ব্যবসায়ী আলো মিয়া আধা কেজি পুঁটি ৪০০ টাকায় ক্রয় করেন এবং আধা কেজি ট্যাংরা ৬০০ টাকায়, একটি এক কেজির বোয়াল মাছ ১ হাজার টাকায় কিনেছেন।

বর্ষার موسم হওয়ায় দেশি মাছের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গাউছিয়ার তাতবাজার থেকে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু। এছাড়া তিনি এক হাজার টাকা কেজির চিংড়ি ও ২ হাজার ৩০০ টাকায় ইলিশও কিনেছেন। মিঠু বলেন, দেশি মাছের দাম বেশ তাতোড় হলেও বাসার লোকজনের প্রিয় হওয়ায় তা কেনেন।

বাজারে ছোট মাছের পাশাপাশি বড় আকৃতির মাছও মিলছে। ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে ১২ কেজির একটি রুই মাছ পাওয়া যায়, যার কেজি দরে দাম ১ হাজার ৬০০ টাকা। ৪ কেজির চিতল মাছের প্রতি কেজি দাম এক হাজার টাকা, আর ৬ কেজির আইড় মাছের দাম ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। বাচ্চু মিয়া বলেন, এই মাছগুলো নদীর, সব সময় পাওয়া যায় না, তাই দাম বেশ বেশি।

তাঁর পাশেই মতিন সাত কেজির বাগাড় মাছ সাত হাজার টাকায় বিক্রি করতে চান। মতিনের মতে, বড় পরিবারগুলো বড় মাছ কেনে কারণ নদীর বড় মাছগুলো সুস্বাদু হয়।

মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম বাজার ও আকারের উপর নির্ভর করে ভিন্ন হয়। পুঁটির দামে প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বেলে মাছ ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০, বোয়াল ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়।

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ৫৯ শতাংশই চাষের, যেখানে নদী, খাল, বিল ও হাওরের মতো মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন মাত্র ১৫-১৭ শতাংশ। যদিও মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ চাষের মাছের থেকে অনেক ভাল ও চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি।

বর্ষার নতুন পানির আগমনের সঙ্গে সঙ্গে খেত, বিল ও নদীতে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পাওয়া যায়। মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, বর্ষায় প্রায় ৩০-৩৫ প্রজাতির ছোট মাছ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পাওয়া যায়।

মুড়াপাড়া কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষার শুরুতে ডিম থেকে পোনা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বৃষ্টির ফলে নালা-বিল ও নদীর সংযোগ থাকায় মাছ ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পায়।

মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন বলেন, দেশের মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হচ্ছে। রূপগঞ্জে এখনো যথেষ্ট অভয়াশ্রম নেই, তাই নদী ও খাল-বিলের গভীর অংশে বছরজুড়ে মাছ ধরা নিষেধ করে মাছের প্রজনন ও সংরক্ষণে কাজ করা হচ্ছে এবং এ ধরণের অভয়াশ্রম বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।