প্রকৃতিতে এখন ভাদ্র মাস। অব্যাহত বর্ষণে সব জলাশয় জমি পরিণত হয়েছে পানির আঁধারে। খাল-বিল, জলাশয় সবই পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে, যা মাছের ঝাঁকের বিচরণে সহায়তা করছে। বর্ষার এই সময়টিতে জেলেরা আর শৌখিন মাছ শিকারিরা একযোগে মাছ ধরার ধুমে মেতে উঠেছেন। সারাদিন নানা পদ্ধতিতে মাছ শিকার চলছে, ছোট থেকে বড় সবাই বেশ উত্তেজিত। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন। অনেকে বলছেন, বড়শি দিয়ে মাছ শিকার শুধু একরকম শখই নয়, এটি মনকে প্রশান্ত করে এবং একঘেয়েমি জীবনের ক্লান্তি কাটিয়ে দেয়। তাই অনেক শৌখিন মাছ শিকারি বোঝেন, এটি মূলত তাঁদের নিজস্ব এক অনুরাগ ও উপভোগের বিষয়। বিভিন্ন উপজেলায় এই সময়ে জলাশয়গুলোতে মাছ শিকার বেশি লক্ষ্য করা যায়। যারা মাছ শিকার করেন, তারা নানা পদ্ধতি অবলম্বন করেন—ঝাঁকি জাল, টানা জাল, ঠেলা জাল, বড়শি, পেতারা এবং অজস্র অন্য পদ্ধতি। বড়শিতে ধরা মাছগুলো স্থানীয় বাজারে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয় এবং কিছু বাড়িতে রান্না করে পরিবারের সঙ্গে উপভোগ করেন। বর্ষার এই সময়টিতে বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যায়, যেমন রুই, কার্ফু, ছোট কাতল, শোল ইত্যাদি। পর্যটকদের মধ্যেও এই মাছের চাহিদা বেশ বেশি। ব্যাপারটি এতটাই জনপ্রিয়, যে জেলেরা প্রতিদিনই এই উৎসবমুখর পরিবেশে মাছ শিকার করেন। উপজেলা নগরপাড়া থেকে দেখা গেলেন সফিক মিয়াকে, যিনি সাতারকুল থেকে এসেছেন মাছ শিকার করতে। তিনি বললেন, “আমি প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড়শি দিয়ে মাছ ধরি, শখের বসে। মাছ ধরা মূলত ধৈর্য্যের পেছনে, মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হলেও শেষ সময়ে বড় মাছ ধরা দেয়।” আরেক মাছ শিকারি জালাল মিয়া বললেন, “মাছের লোভে নতুন নতুন খাবার আমাদের বানাতে হয় যাতে মাছগুলো বড় রকমের বড়শিতে ধরা পড়ে।” এই মাছ ধরে ধরা অব্যাহত থাকলেও কিছু অসাধু জেলে ঝাল জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা চালিয়ে যাচ্ছেন, যা মাছের প্রজননে হুমকি সৃষ্টি করছে। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, জলাশয়গুলোতে দেশীয় মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে কিছু অসাধু জেলেদের অবাধে দড়ি ও জাল ব্যবহার বন্ধে তারা কঠোরভাবে অভিযান চালাচ্ছেন। উপজেলা প্রশাসনও সচেতন, তারা বলেন, “প্রকৃতি আমাদের অমূল্য সম্পদ, এর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। জলাধার রক্ষা করে তার থেকে সর্বাত্মক উপকারে জীবনযাপনই আমাদের লক্ষ্য।” বর্ষার এই সময় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।