তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে টিকে থাকার লক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় শুরু হবে ম্যাচটি, যেখানে টাইগাররা নিজেদের মর্যাদা রক্ষা এবং সিরিজে সমতা ফেরাতে সচেষ্ট থাকবে।
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৭৭ রানে পরাজিত হয় বাংলাদেশ, যা ছিল দুঃখজনক। ইনিংসের শুরুতেই মাত্র ২৬ বল খেলে ৫ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা মাঠ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল, যা ভক্ত ও ক্রিকেটার দুই পক্ষের জন্য বড় ধাক্কা। এই ব্যাটিং বিপর্যয় নিয়ে বাংলাদেশ পেসার তাসকিন আহমেদ জানান, ‘আমি তখন ড্রেসিংরুমে কফি খাচ্ছিলাম হঠাৎ করেই ৫ উইকেট পড়ে গেল। আশা করছি আগামী ম্যাচে আমরা ফিরে দাঁড়াব এবং ভুল থেকে শিক্ষা নেব।’
প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৪৫ রানের টার্গেট একটি ভালো লক্ষ্য ছিল। বাংলাদেশের ব্যাটাররা শুরুতে ভালো পারফরমেন্স দেখিয়েছিল; ১ উইকেটে ১০০ রান তুলে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্তের রান আউটের পর ধীরে ধীরে বিপর্যয় শুরু হয়। শ্রীলঙ্কার স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা নিজের প্রথম ওভারে দুই উইকেট নিয়ে লিটন দাস এবং দলের সর্বোচ্চ রান করা তানজিদ হাসান তামিমকে থামান। সেই সঙ্গে কামিন্দু মেন্ডিসের স্পিনও শ্রীলঙ্কার জন্য আরও দু’টি উইকেট এনে দেয়।
তাসকিন বলেন, ‘আমরা দুর্দান্ত শুরু করেছিলাম, সবকিছু আমাদের পক্ষে চলছিল। কিন্তু সে রান আউট ও ক্রিজে সেট ব্যাটার তানজিদ আউট হওয়ার পর আমাদের মনোবল ভেঙে পড়ে এবং আতঙ্ক তৈরি হয়।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারিনি এবং চাপের মুখে ভেঙে পড়েছিলাম। যদিও এটি লো স্কোরিং মাঠ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচ হারার সম্ভাবনা বেশি থাকে, তবুও আমাদের ছিল ম্যাচটিকে নিজের পথে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ।’
সিরিজে টিকে থাকতে হলে দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্যই উন্নতি করতে হবে বলে মনে করেন তাসকিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পারফরমেন্স উন্নত করা খুবই জরুরি। সেরা ১৫-২০ জন খেলোয়াড় নিয়ে দল গড়ে তুলেছি। বোলিং, ব্যাটিং এবং খেলোয়াড়দের সচেতনতা বাড়িয়ে আমরা শীর্ষ টিমগুলোর সাথে তাল মিলানোর চেষ্টা করছি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ড বেশ হতাশাজনক; ৫৮ ম্যাচে মাত্র ১২ জয়, ৪৪ পরাজয় এবং ২ ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত। বর্তমান সিরিজসহ সম্প্রতি সাতটি ওয়ানডে ম্যাচ সিরিজে পরপর হারের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে টাইগারদের। শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড আরও বাজে; ২৫ ম্যাচে মাত্র ২ জয়, ২১ হার এবং ২ পরিত্যক্ত ম্যাচ। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় দ্বিপাক্ষিক সিরিজের সময় বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল।
অপরদিকে, শ্রীলঙ্কা সর্বশেষ পাঁচ সিরিজের চারটিতে জয় লাভ করেছে এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত করার লক্ষ্য রেখেছে।
বাংলাদেশ দল ঘোষণা করা হয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজের অধিনায়কত্বে, যেখানে তানজিদ হাসান তামিম, পারভেজ হোসেন ইমন, মোহাম্মদ নাইম, নাজমুল হোসেন শান্ত, তাওহিদ হৃদয়, লিটন দাস, জাকের আলী, শামীম পরিবর্তী, রিশাদ হোসেন, তানভীর ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা ও হাসান মাহমুদ জনশক্তি হিসেবে আছেন।
শ্রীলঙ্কার দলে চারিথ আসালাঙ্কা অধিনায়কত্বে খেলবেন, দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন পাথুম নিশাঙ্কা, আভিস্কা ফার্নান্দো, নিশান মাধুশকা, কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, কামিন্দু মেন্ডিস, জেনিথ লিয়ানাগে, দুনিথ ওয়েলালাগে, হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, মহেশ থিকশানা, জেফরি ভান্ডারসে, মিলান রত্নায়েকে (ফিট থাকলে), দিলশান মাধুশঙ্কা, আসিথা ফার্নান্দো ও ইশান মালিঙ্গা।
আগামীকালকের ম্যাচ থেকে প্রত্যাশা থাকবে বাংলাদেশের ভাল পারফরমেন্সের এবং সিরিজ বাঁচানোর দৃঢ় লড়াইয়ের, যেখানে ক্রিকেটপ্রেমীরা মাঠে উত্তেজনাপূর্ণ এবং দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে পাবেন।