“যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজ করো, যা সবার জন্য ভালো।” বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের এই সিগনেচার বাক্যই হয়তো তার সফলতার রহস্য। দলীয় সভা কিংবা ব্যক্তিগত আলোচনা— সর্বত্রই তিনি এই কথাটি জোরালোভাবে স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু ‘সবাই’ মানে কারা? আর ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা আমাদের সবার জন্য জরুরি।
পিটার বাটলারের মতে, ‘সবার’ অর্থ হলো পুরো বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে দলের সার্থেই কাজ করা। হয়তো এই অদম্য মনোভাবের কারণেই বাটলার এবং তার তত্ত্বাবধানে থাকা বাংলাদেশ দল আজ ফুটবল বিশ্বের নজরে।
দুটো পরপর সাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা থেমে থাকেননি। তারা ক্যারিয়ারের সৌন্দর্য বাড়াতে চেয়েছে বৃহত্তর ময়দানে, আন্তর্জাতিক শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলার মধ্য দিয়ে নিজেদের উজ্জ্বল করতে চেয়েছে, যা ফলেও প্রমাণিত হয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় এশিয়ার মঞ্চে প্রথমবারের মতো লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশ সারাদেশকে গর্বিত করলো। আগে কখনো এমন দৃঢ় ও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ টিম দেখেনি দর্শক। তিনিই যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে হারিয়েছে এবং শারীরিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে প্রস্তুত হয়ে জাতীয় দলের জন্য এশিয়ান কাপ খেলতে পার্মিশন নিশ্চিত করেছে। পুরো দলেই এখন এক অনন্য সাহসিকতা ও দক্ষতায় পরিপূর্ণ এক নতুন আবির্ভাব ঘটেছে।
বাটলার নিজে ইংল্যান্ড থেকে এসে সর্বশেষ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেছিলেন। তিনি ২০২২ সালে বাংলাদেশে আসার পর থেকেই দলকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছেন। তার কঠোর নিয়ম এবং স্পষ্ট প্রস্তুতি লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স আনয়ন। দল থেকে কেউই বিশেষ সুবিধা পায় না, এবং ৯০ মিনিটের পুরো ম্যাচে যদি কাউকে তৈরি থাকতে না পারে তবে তার দল থেকে জায়গা হবে না। সেই মানসিকতা দলকে একদিকে শৃঙ্খলার দিকে নিয়ে গেছে, অন্যদিকে পারফরম্যান্সের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাটলারের দল ব্রিটিশ ফুটবলের ‘ডিরেক্ট স্টাইল’ থেকে আলাদা। তার কৌশলগত ফুটবল হাই প্রেসিং, দ্রুত বল দখল ও ঝড়ের মতো আক্রমণে নিয়োজিত, যা আগে কখনো বাংলাদেশে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ফুটবলারের টেকনিক্যাল দক্ষতার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে দারুণ ট্যাকটিক্যাল জ্ঞান ও ফিজিক্যাল শক্তি। ‘থ্রি এস’—স্পিড, স্ট্রেংথ এবং স্ট্যামিনা— এই তিনটি গুণ এখন পুরোদমে উপস্থিত দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে।
অবশ্য, উন্নতির জায়গা এখনো অনেক। যদি প্রত্যাশামাফিক পরিশ্রম ও অঙ্গীকার বজায় থাকে, তবে আগামী দিনে বাংলাদেশ শুধু এশিয়ার মঞ্চই নয়, বরং বিশ্বকাপেও জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।
লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় ও জাতীয় দলের সদস্য