ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশ এশিয়ায় জাপানের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: ড. ইউনূসকে জাইকা শীর্ষ কর্মকর্তা

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) নির্বাহী সিনিয়র ভাইস

প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরা বলেছেন, এশিয়ায় বাংলাদেশ এখনও জাপানের অন্যতম

গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং দেশটি বাংলাদেশের উন্নয়নের যাত্রায় সহযোগিতা অব্যাহত

রাখবে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মিয়াজাকি কাতসুরা বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য আমরা গভীরভাবে শোকাহত।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে বিনিয়োগ, মৎস শিল্প, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা

ও তরুণদের উন্নয়নে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জাপান সবসময়ই আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু। সম্প্রতি জাপান

সফরকালে আমি ও আমার প্রতিনিধি দল যে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা পেয়েছি, তা আমাকে

গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ি প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে একে দেশের ভবিষ্যতের

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে অভিহিত করেন। 

আরও পড়ুন: গুমের সঙ্গে সেনা সদস্যদের জড়িতের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা: সেনা সদর দপ্তর

সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতির সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি জাপানে জাইকার

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আমি বলেছিলাম আমরা একটি ব্লু ইকোনমির দেশ হতে

চাই।’

ড. ইউনূস বাংলাদেশের তরুণদের জন্য জাপানে শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানোর পাশাপাশি

কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোরও অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, ‘অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে যেতে চায়। কিন্তু সমস্যা হলো ভাষায়। আমরা

আহ্বান করছি যে—জাপানি শিক্ষকরা এখানে আসুক, অথবা দূরশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের

মানুষকে জাপানি ভাষা ও কর্মক্ষেত্রের আচরণ শেখানো হোক।’

প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সমস্যার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত

নাজুক। হাজার হাজার রোহিঙ্গা তরুণ ক্যাম্পে ভবিষ্যতের কোনো আশা ছাড়াই বেড়ে উঠছে।

এতে তারা ক্রমেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।’

জবাবে মিয়াজাকি ২০২৬ সালে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে

উত্তরণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘জাইকা এ দেশের বিচার বিভাগ, সরকারি প্রশাসন,

স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে সহায়তায় নজর দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইসিটি খাতে দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে জাপান-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্প হাতে

নিয়েছে। এ প্রকল্পে স্থানীয় সরকার, কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যুক্ত থাকবে।

তরুণদের উন্নয়নের প্রসঙ্গে ড.ইউনূস বলেন, ‘আমাদের মেয়েরা ক্রীড়াক্ষেত্রে অসাধারণ

উন্নতি করেছে। তারা সব জায়গায়ই জিতছে। গতকালও তারা একটি ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে।

আমরা তাদের জন্য হোস্টেলের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। তবে তাদের স্বাস্থ্যসেবা ও

প্রশিক্ষণের জন্য সহায়তা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে মিয়াজাকি বলেন, জাপান বিভিন্ন দেশে শিক্ষা প্রকল্পে

স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে এবং বাংলাদেশের নারীদের ক্রীড়া খাতে আরও সহযোগিতা বিবেচনায়

নিচ্ছে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি ১০০ কোটি ডলারের ঋণ ও অনুদান চুক্তির জন্য জাপানকে

ধন্যবাদ জানান। এই অর্থ দেশের অর্থনৈতিক সংস্কার, রেলপথ নির্মাণ ও মানবসম্পদ

উন্নয়নে ব্যয় হবে। তিনি বার্ষিক জাপানি অনুদানের পরিমাণ ৩০০০ কোটি ইয়েন থেকে

বাড়িয়ে সাড় ৪ হাজার কোটি ইয়েনে উন্নীত করার অনুরোধ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘বাংলাদেশের জনগণ জাপানের বন্ধুত্ব ও উন্নয়নে সহযোগিতার জন্য

আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে।’