ঢাকা | শনিবার | ৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

বিসিবি ১০ কোটি টাকায় স্থাপন করবে আধুনিক বায়োমেকানিক্স ল্যাব

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পূর্বাচলের ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে একটি আধুনিক বায়োমেকানিক্স ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই ল্যাব তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রিকেটারদের চোট ঝুঁকি কমানো এবং তাদের পারফরম্যান্স ও টেকনিক্যাল দিকটি আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা।

বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান ফাহিম সিনহা জানিয়েছেন, ল্যাব স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যেই পরামর্শক খোঁজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো এই ধরনের ল্যাব পরিচালনার জন্য যথাযথ কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞরা কম থাকায় ভারত বা পাকিস্তান থেকে অভিজ্ঞ পরামর্শক আনা হবে। শুরুতে বিদেশি টেকনিশিয়নরা ল্যাবটি পরিচালনা করবেন, পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে যাতে ভবিষ্যতে স্থানীয় প্রযুক্তিবিদরাও দক্ষ হয়ে ওঠেন।

একটি মানসম্পন্ন বায়োমেকানিক্স ল্যাব তৈরি করতে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে; তবে যদি কারিগরি সুবিধা বাড়িয়ে আরও বড় পরিসরে এটি করা হয়, তাহলে খরচ ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার মধ্যে হতে পারে। বিসিবি প্রথম ধাপে স্বল্প পরিসরে ল্যাবটি চালু করার পরিকল্পনা করছে এবং ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করবে।

এই ল্যাবে ক্রিকেটারদের ব্যাট সুইং, বোলিং অ্যাকশন, পায়ের ভর, পেশির শক্তি ও চোটপ্রবণতার সম্ভাবনা যাচাই করা হবে। এছাড়া ব্যাট, বল, গ্লাভস ও জুতো ব্যবহারের সঠিকতার বিশদ বিশ্লেষণও পাওয়া যাবে। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য ব্যবহার করে সমস্যা সনাক্ত ও সমাধান সহজে করতে পারবেন। এর ফলে বোলাররা আর নিজেদের অ্যাকশন যাচাইয়ের জন্য বিদেশ যেতে হবে না।

বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট প্রধান আরও জানিয়েছেন, ‘খেলাধুলায় বায়োমেকানিক্স বা স্পোর্টস সায়েন্সের বিকল্প নেই। বিশ্বের প্রতিটি উন্নত ক্রিকেট দল নিজস্ব ল্যাব রয়েছে। ভারতে বর্তমানে ১১টি বায়োমেকানিক্স ল্যাব কাজ করছে। আধুনিক ক্রিকেটে যে পরিবর্তনগুলো হচ্ছে, তা মূলত ল্যাবভিত্তিক গবেষণার ফলাফল।’

আগে বিকেএসপির বায়োমেকানিক্স ল্যাব ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল, যেখানে বিদেশি বিশেষজ্ঞও আনা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারের অভাবে সেটি এখন কাজে অস্থির হয়ে পড়েছে। বিকেএসপির মহাপরিচালক মো. মুনীরুল ইসলাম বলেন, ল্যাবে কিছু সফটওয়্যার আপডেটের প্রয়োজন আছে যা তারা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের জন্য এই ল্যাব ব্যবহার অবশেষে হচ্ছে।

দেশে নিজের বায়োমেকানিক্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্থানীয় ফিজিও-ট্রেনারদের কাজ অনেক সহজ হবে এবং খেলোয়াড়রাও উপকৃত হবেন। বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী বলেছেন, ‘সফল ক্রীড়াবিদদের পেছনে ক্রীড়াবিজ্ঞানের অবদান অপরিহার্য। বায়োমেকানিক্স স্পোর্টস সায়েন্সের অন্যতম শাখা যা খেলোয়াড়ের দক্ষতা বৃদ্ধি ও চোট কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তবে সেটি কতটা দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

বিসিবি স্থানীয় কোচদেরও এই প্রযুক্তির বিষয়ে আরও বিস্তারিত ধারণা দিতে চায়, কারণ খেলোয়াড়দের ল্যাব ভিত্তিক সমাধান দানের কাজ তারা করতেই হবে। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম স্পোর্টস সায়েন্সে আগ্রহী হওয়ায় এই উদ্যোগে বোর্ডের সমর্থন রয়েছে।

তবে ল্যাব স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু কবে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। আগামী অক্টোবরে বিসিবির নির্বাচন থাকায় তার আগে কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ফাহিম সিনহা জানিয়েছেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদের জন্য প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত রয়েছে। এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য নতুন সূচনা হবে।