ঢাকা | বুধবার | ২০শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বেরোবিতে ছাত্র সংসদের নামে ৪৫ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও ছাত্র সংসদের কোনো

আইন প্রণয়ন হয়নি। অথচ ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ফি’র নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ হাজার

৪৬৭ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪০০ টাকা সংগ্রহ করা হলেও দীর্ঘদিন

ধরে এই অর্থের কোনো স্বচ্ছতা বা হিসাব প্রকাশ করেনি কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ

পরিকল্পিতভাবে নেতৃত্ব বিকাশের পথ রুদ্ধ করেছেন। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু

নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েনি, গণতান্ত্রিক চর্চা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা থেকেও

বঞ্চিত হচ্ছেন।

এই প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংসদ আইন বাস্তবায়ন ও নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে গত রবিবার থেকে

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে আমরণ অনশনে বসেছেন একদল শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার(১৯ আগস্ট) বিকাল ৪টা পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়া ৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে জাহিদ

হাসান জয় ও মাহিদুল ইসলাম মাহিদকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৮ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করা এই অঞ্চলের

সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠে ছাত্র সংসদ বিষয়ে আইনটি কৌশলে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়

আইন-২০০৯ পাশ করা হয়েছে।

পড়ুন: দাবি আদায়ে অনড় বেরোবি শিক্ষার্থীরা, ১০ কার্যদিবস সময় চাইলেন উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদেরে নামে কোনো কিছুই অবশিষ্ট না থাকলেও প্রতি বছর

প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২০০ টাকা হারে অর্থ নেওয়া হতো। সেই হিসেবে ২০০৮ থেকে

২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পাঁচ উপাচার্যের আমলে ১৯ হাজার ৬৬৭ জন শিক্ষার্থীর

কাছে ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪০০ টাকা সংগ্রহ করে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল ফান্ডে রেখে

ইচ্ছেমতো খরচ করেছেন সেই সময়কার প্রশাসন।

তবে, ২০২৩-২০২৪ ও ২০২৪-২০২৫ শিক্ষা বর্ষে ২ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সংগ্রহ

করা ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছাত্র সংসদ নামে অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ইলিয়াছ প্রামাণিক জানান, ২০০৯ সালের বিশ্ববিদ্যালয়

আইনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নামে কোনো আইন পাস করা হয়নি।

এরপর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ কার্যকর

করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চলতি বছরের ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনে একটি চিঠি

দিলে মঞ্জুরি কমিশন ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ এর গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদন

নেওয়ার জন্য খসড়া সংবিধিটি পরীক্ষা ও চূড়ান্তকরণ করতে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন

করে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ তানজীম

উদ্দিন খানকে। আইনি ভেটিংয়ের পর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই আইন আকারে প্রকাশ হবে।

এদিকে, ছাত্র সংসদ নির্বাচন আইন না থাকা, নির্বাচনের চূড়ান্ত রোডম্যাপ ঘোষণা না

করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির

অভিযোগ তুলে গত রবিবার সকাল ১১টা থেকে একদল শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেছেন।

বিষয়টি নিরসনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের

মঞ্জুরি কমিশন, আইন উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন উপাচার্য ড. শওকাত আলী। তাতেও কোনো

সমাধান আসছে না।

বেরোবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন উপেক্ষা

করছে—এমন অভিযোগ এনে সোমবার বিকাল তিনটায় আবু সাঈদ চত্বরে কমিশনের গায়েবি জানাজা

করেছে শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন শহরের বৈষম্যবিরোধী

শিক্ষার্থীরাও।

অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ১৭ বছরে কোনো ছাত্র সংসদ নেই। অথচ ছাত্র

সংসদের নামে কোটি টাকা উঠেছে। আমরা জানি না এই টাকা কোথায় গেল। পরিকল্পিতভাবে

আমাদের নেতৃত্ব ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

আরেকজন শিক্ষার্থী জানান, ছাত্র সংসদ হলো শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু

প্রশাসন তা বাস্তবায়ন না করে উল্টো অর্থ লোপাট করেছে। আমরা অবিলম্বে ছাত্র সংসদ আইন

ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চাই। ছাত্র সংসদ আইন বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ছাড়া

অনশন ভাঙবেন না তারা।

অনশনের কারণে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন

অভিভাবক ও শিক্ষকরাও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শওকাত আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে

আমি একমত। ছাত্র সংসদ আইন ছিল না। আমি নিয়োগ পাওয়ার পর খসড়া করে তা সিন্ডিকেটে পাশ

করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এখন কমিশনে আছে ভেটিংয়ের জন্য।

এরপর রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলেই হবে। শিক্ষার্থীরা অনশনে কষ্ট করছে, আমি সরকারের

উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছি, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। চাইলে কালই এই আইন পাস হবে

এমনটা নয়। আমি আশ্বস্ত করছি আগামী অক্টোবরের মধ্যে এই আইন পাস হবে।