ঢাকা | বৃহস্পতিবার | ১৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের পেটানো রংপুরের সেই ওসিকে ১১ মাস পর বদলি

রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগে

অভিযুক্ত তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম সরদারকে ১১ মাস পর বদলি

করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি কোতোয়ালি থানায় ওসি (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। 

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকালে শাহ আলম সরদারকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করেন রংপুর

মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী।

শাহ আলম সরদারের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৬ জুলাই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের দিন তিনি রংপুর

নগরীতে চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের

পেটানোর অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে

সমালোচনা ঝড় শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা দিনটিকে শহীদ আবু সাইদ হত্যার ‘পূর্ব মুহূর্ত’

হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বছরের ১৬

জুলাই রংপুর নগরীর জিলা স্কুলের সামনে জড়ো হন কয়েকশো শিক্ষার্থী। সেখান থেকে তারা

একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টাউন হলের দিকে অগ্রসর হলে, পুলিশ লাইন্স মোড়ে এসে বাধার

মুখে পড়ে। পুলিশ মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে।

অভিযোগ রয়েছে, কোতোয়ালি জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান ও কোতোয়ালি

থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) শাহ আলম সরদারের নির্দেশেই ওই লাঠিচার্জ চালানো হয়।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় ওসি শাহ আলম নিজেও অংশ নেন।

ভিডিওচিত্র ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ১৬ জুলাইয়ের সেই

মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ শুরু হলে কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) শাহ আলম

সরদারকে শিক্ষার্থীদের লাথি ও ঘুষি মারতে দেখা গেছে। পুলিশ লাইন্স মোড়ে মিছিল

ছত্রভঙ্গ করার সময় শাহ আলম সরদার শিক্ষার্থীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করছেন। এ

সময় তার নেতৃত্বে অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও আন্দোলনকারীদের ওপর বেপরোয়াভাবে

লাঠিচার্জ চালান এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

জানা গেছে, পাঁচ আগস্ট পট-পরিবর্তনের পর আন্দোলনকারীদের মিছিলে হামলার ঘটনায় জড়িত

বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হলেও, শাহ আলম সরদার ছিলেন ব্যতিক্রম। উল্টো

শাস্তির বদলে তাকে রংপুর নগরীরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ থানার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি

তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পদায়ন

পান। 

ওসি শাহ আলম সরদারকে বদলির সিদ্ধান্তকে দায়ীদের ‘রক্ষা ও উৎসাহ দেওয়ার নমুনা’

হিসেবে দেখছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের মতে, জড়িত ওসি শাহ আলমের দায়মুক্তি নিশ্চিত

করতেই তাকে বদলি করা হয়েছে।

কেন এতদিন ওসি শাহ আলম সরদারকে বদলি করা হয়নি— এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেননি

পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী। 

তিনি বলেন, তাজহাট থানার ওসিকে সরানো হয়েছে। তাকে বর্তমানে গোয়েন্দা ইউনিটে বদলি

করা হয়েছে।

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতারা বলছেন, ওসি শাহ আলম সরদারকে মেট্রোপলিটন

পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন, এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না।