ঢাকা | মঙ্গলবার | ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

ভাঙা সড়ক ও তীব্র যানজটে দুর্ভোগ কুমিল্লা নগরবাসীর

ভাঙা সড়ক ও তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দারা। বিশেষ করে শাসনগাছা থেকে আলেখারচর পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির বেহাল অবস্থা জনজীবনে বড় ধরনের ভোগান্তির সৃষ্টি করেছে। প্রায় এক কিলোমিটার স্থল জুড়ে গর্ত, কাদা ও পানি জমে যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি সড়কের দুপাশে ফুটপাতও নষ্ট হওয়ায় পথচারীরা যেন হেঁটে চলতেই পারেন না। নোয়াপাড়া পাসপোর্ট অফিসের সামনে ও শাসনগাছা ফ্লাইওভার পর্যন্ত বড় বড় গর্তের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে।

দিঘীরপাড়ের ষাটোর্ধ বৃদ্ধ নোয়াব আলি বলেন, যাদের এই এলাকায় বসবাস, তারা এই খারাপ সড়কের কারণে মেঘলা মৌসুমে চলাচলই করতে পারেন না। তিনি জানান, প্রায় এক বছর ধরে সড়কের অবস্থা অপরিবর্তিত। গ্যারেজ মালিক আবুল হোসেন বলেন, জেলা শহরে প্রবেশের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কের দুঃখজনক অবস্থা তাদের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। নোয়াপাড়ার স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম জানান, সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে; সম্প্রতি এক অটোরিকশার উল্টে যাওয়ায় দুইজন আহত হয়েছেন।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, সড়ক দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই সড়কের মাধ্যমে অনেক ভারী যানবাহন চলাচল করে, তাই এবার কঙ্খিত সংস্কার করা হবে।

শাসনগাছা হয়ে কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অবস্থাও ভয়াবহ। রানীর বাজার, নজরুল অ্যাভিনিউ, ইপিজেড সড়কের অনেক অংশ ভেঙে গেছে এবং চলাচলের উপযোগী নয়। এই ভাঙাচোরা সড়কের ফলে যানজটের মাত্রাও বেড়ে গেছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে মোট পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিমি এবং কাঁচা সড়ক ৫ কিমি রয়েছে। কিন্তু নানা অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কারণে অধিকাংশ জায়গায় যানজট ও দুর্ভোগ চলছে। অবৈধ পার্কিং, দোকানপাট, হকার, এবং অটোরিকশা ও ইজিবাইকের অতিরিক্ত চলাচল, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক ব্যবস্থা ও জনবল সংকট এই সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েও অধৈর্য হয়ে পড়েছে।

গত কয়েকদিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কান্দিরপাড় থেকে পুলিশ লাইন্স রোড, টমছমব্রিজ ও রানীর বাজারে তীব্র যানজট লেগেই থাকে। নগরীর বিভিন্ন প্রধান মোড়েও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজটের কারণে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মোঃ পারভেজ জানিয়েছেন, জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করার জন্য ৭৯ জন পুলিশ রয়েছে যা প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় অর্ধেকেরও কম। তবুও তারা সীমিত জনবল নিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করছেন।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, যানজট কমানোর জন্য জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি কাজ করছে। তবে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে তাদের অভিযান চালানোর পরও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তিনি জানিয়েছেন, কোষ্ঠকাঠিন্যের মাঝেও যথাসাধ্য চেষ্টা চলছে।

সড়ক পরিবর্তন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ দখল রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না হলে কুমিল্লা নগরবাসীর দিন বহুদূর দুর্ভোগময় হতে পারে। প্রশাসনের কাছে এখন সময়োচিত পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগের দাবি রয়েছে।