কুমিল্লা নগরীতে ভাঙা সড়ক ও তীব্র যানজটের কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছেন দেরি। বিশেষ করে শাসনগাছা থেকে আলেখারচর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘি সড়কটি এমন নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে, যা থেকে এখানে বসবাসকারী ও চলাচলকারীদের দুঃখ-দুর্দশার অন্ত নেই। বড় বড় গর্ত আর কাদাপানি মাড়িয়ে যানবাহনগুলো প্রবেশ করলেও পথচারীদের জন্য এটি এক দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফুটপাতও ঠিকমত নেই, ফলে পায়ে হেঁটে চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
দিঘীরপাড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ নোয়াব আলি জানান, ‘‘আমি বহু বছর এখানে থাকি, মেঘলা মৌসুমে সড়কটি চরম বিপদজনক হয়ে ওঠে। গত এক বছর ধরে এই অবস্থা।’’ সড়কের পাশে গ্যারেজ চালানো আবুল হোসেন বলেন, ‘‘এত গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি এমন বেহাল কেন? এতে আমাদের ব্যবসায় এবং বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে।’’ নোয়াপাড়ার যুবক সাইফুল ইসলাম জানান, ‘‘প্রতিদিন ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি এক অটোরিকশা উল্টে দুইজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি অত্যন্ত দুঃখজনক।’’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, ‘‘এই সড়ক দ্রুত সংস্কারের আওতায় আনা হবে। ভারী যানবাহনের কারণে এর অবস্থা খারাপ হয়েছে, এবার ক্রংকিটের ডালাইয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন করা হবে।’’
শাসনগাছা এলাকার ভাঙাচোরা সড়কগুলোসহ রানীর বাজার, নজরুল অ্যাভিনিউ ও ইপিজেড সড়কের দশাও ভয়াবহ। এগুলোও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং যাত্রীদের তীব্র যানজটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মোট ১১০ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৫ কিমি কাঁচা সড়ক। বিভিন্ন অনিয়ম এবং অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার কারণে এসব সড়কে যানজট এখন নিয়মিত। অবৈধ পার্কিং, দোকানপাট, হকার, অতিরিক্ত ইজিবাইক এবং সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
কুমিল্লা জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সারোয়ার মোঃ পারভেজ জানান, ‘‘ট্রাফিক পুলিশের লোকবল অত্যন্ত কম। মাত্র ৭৯ জনের মাধ্যমে ২শোর বেশি প্রয়োজনীয় কাজ সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।’’ সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘‘যানজট কমাতে জেলা প্রশাসনের একটি কমিটি কাজ করছে। আমরা ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান পরিচালনা করছি, তবে এর ফলাফল এখনো সন্তোষজনক হয়নি।’’
কুমিল্লাবাসী এখন প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন যেন তারা দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেন এবং শহরের ভাঙাচোরা সড়ক ও যানজটের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হয়। এই সমস্যাগুলো যেন তাদের দৈনন্দিন জীবনের অশান্তির কারণ না হয়ে উঠে, সেই প্রত্যাশাই এখন জনগণের মুখে মুখে উচ্চারিত।