রাজধানীর ধানমন্ডি থানার প্রতারণা ও চাঁদা দাবির মামলায় আলোচিত মডেল মেঘনা আলমের
জব্দ করা মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো উপাদান রয়েছে কিনা—তা তদন্তের
নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম এই
নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি মেঘনা আলমকে গ্রেপ্তারের সময় জব্দ করা ম্যাকবুক, পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন ও
ল্যাপটপের মালিকানা যাচাই করে তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৩১ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল
করতে বলা হয়েছে।
গত ২২ জুন মেঘনা আলম তার কাছ থেকে জব্দ করা ম্যাকবুক, পাসপোর্ট, মোবাইল ও ল্যাপটপ
জিম্মায় নেওয়ার আবেদন করেন। আজ ওই আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এই আদেশের সময় মেঘনা
আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মেঘনার আইনজীবী মহসিন রেজা ও মহিমা বাঁধন মেঘনার ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও
পাসপোর্ট ফিরিয়ে দিতে শুনানি করেন।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুন অর রশিদ এর বিরোধিতা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, এটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। বর্তমানে মামলাটি
তদন্তাধীন। ল্যাপটপ ও মোবাইল ব্যবহার করে কোন কোন ব্যবসায়ী ও কূটনীতিককে ব্ল্যাকমেল
করতেন—তা জানা প্রয়োজন।
পড়ুন: জামিন পেলেন মডেল মেঘনা আলম
তখন মেঘনা আলম আদালতকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতের প্রফেশনাল সম্পর্ক
রয়েছে। সৌদি রাষ্ট্রদূত ইশা আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলেছিলেন। তার যথেষ্ট প্রমাণ
আমার কাছে রয়েছে।’
আমি প্রমাণ দিতে পারব আমাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলা হয়েছিল নাকি আমি কাউকে প্রেমের
ফাঁদে ফেলেছিলাম।
এসময় বিচারক বলেন, এখন এটা আলোচনার বিষয় নয়।
এরপর মেঘনা আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আমার ওপর নির্ভর করে। ছয়টি মহাদেশের
১০টি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করি। আমার ব্যবহৃত ম্যাকবুক, ল্যাপটপ, মোবাইল ও
পাসপোর্ট ফেরত চাই।’
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, তিনি নারীদের নিয়ে কী কাজ করেন, তা মামলার
এজাহারে স্পষ্ট। তিনি মূলত নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেল করতেন। তখন মেঘনা প্রতিবাদ
জানিয়ে বলেন, ‘আপনি রাষ্ট্রদূতকে অসম্মান করছেন।’
এরপর উভয় পক্ষ তর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ পর্যায়ে মেঘনা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি নিরপরাধ।’
গত ২৮ এপ্রিল মেঘনা আলমের ৩০ দিনের আটকাদেশ বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে আদালত তাকে জামিন দেন। ওই দিনই কারামুক্ত হন তিনি। এর পর থেকে তিনি জামিনে
রয়েছেন।
এর আগে গত ৯ এপ্রিল বাসা থেকে আটক হন মেঘনা আলম। পরদিন ১০ এপ্রিল বিশেষ ক্ষমতা আইনে
৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
গত ১৭ এপ্রিল কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে মেঘনাকে ধানমন্ডি থানার চাঁদাবাজি ও
প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
মেঘনা আলম ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেওয়ান সমির এবং আরও দুই-তিনজন বিদেশি
রাষ্ট্রদূতদের সুন্দরী নারীদের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা
আদায়ের পরিকল্পনা করেন।
এই অভিযোগে গত ১৫ এপ্রিল ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ আবদুল আলিম মামলাটি
করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয়
সদস্য, যারা সুন্দরী নারীদের মাধ্যমে বিদেশি কূটনীতিক ও ধনী ব্যবসায়ীদের প্রেমের
ফাঁদে ফেলে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায় করতেন।
অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মার্চ ধানমন্ডির একটি জাপানি রেস্টুরেন্টে এক কূটনীতিকের কাছ
থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনায় বৈঠক করেন তারা।
মেঘনা আলম শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার ম্যাকবুক, পাসপোর্ট, মোবাইল সেট
ও ল্যাপটপ ফেরত চেয়েছি। আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ৩১ আগস্ট আবার
শুনানি হবে।