ঢাকা | মঙ্গলবার | ২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশের দাম

কোরবানির ঈদের পর থেকে চালের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি সবজির দামও গত দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমার লক্ষণ দেখা গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র অবলোকন করা গেছে।

বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ উপভোগ করতে পারছেন না। ঢাকার বাজারে এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা প্রায় চার কেজি গরুর মাংসের সমমূল্যে। ফলে মধ্যবিত্তের পক্ষে ইলিশ কেনা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য মাছের দামও অস্বাভাবিকভাবে বেশি রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ভরা মৌসুম সত্ত্বেও এবার ইলিশের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। সাগর ও নদীতে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সীমিত পরিমাণে, যার ফলে বাজারে এর দাম উর্দ্ধমুখী।

খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, ঈদের পর চালের দাম বাড়ার পেছনে চালকল মালিকদের ভূমিকা রয়েছে। প্রতি বস্তা চালের দাম ৪০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে মধ্যবিত্তরা এখন চাল কিনতে বাধিত হচ্ছেন। বাজারে মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) কেজিপ্রতি ৫৮ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল ৭৪ থেকে ৮০ টাকা এবং মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের এক চাল ব্যবসায়ী বলেছেন, নাজিরশাইল ছাড়া অন্যান্য প্রকারের চালের দাম প্রায় ৮ টাকার মতো বাড়েছে। রামপুরা বাজারের মুদি দোকানের বিক্রেতা জানান, ঈদের পর থেকে চালের দর প্রতি বস্তা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সবজির বাজারেও মূল্যবৃদ্ধি চোখে পড়ছে। বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন কাঁচামরিচ, চিচিঙ্গা, ধন্দুল, পটল, কাঁকরোল, টমেটো, গাজর ও শসার দাম গত কয়েক সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। মিরপুরের সবজি বিক্রেতা জানান, অনেক সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় সরবরাহ কমে গেলে দাম বেড়েছে এবং নতুন মৌসুম শুরু না হওয়া পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

রাজধানীতে ঈদের পরে মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও কমে প্রতি ডজন ১২০ টাকায় নামলেও, এতে খামারিদের লোকসান হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, মুদি পণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, এবং সুজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনের দামও কিছুটা কমেছে।

সার্বিকভাবে, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ক্রয়ক্রম কঠিন হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ইলিশ মাছ ও চালের দাম বৃদ্ধির কারণে তাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপ পড়ছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।