ঢাকা | বুধবার | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য বিদেশ যাত্রায় বিরক্ত ও নিরুপায় হয়ে পড়েছে: ড. আসিফ নজরুল

প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর মালিকদের উদ্দেশ্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, চিকিৎসা খাতে ৪-৫ বিলিয়ন ডলারের বিশাল বাজার রয়েছে, যা তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে চায়? এমনকি বাংলাদেশে আগ্রহী না হয়েও ভারত ও ব্যাংককে চিকিৎসা নিতে যান অনেকেই। এর কারণ হলো দেশে সেবা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং মানুষের বিরক্তি ও নিরুপায়তা। তিনি জোর দিয়েছেন, যদি দেশের হাসপাতালগুলো উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে, তাহলে কেউ বিদেশ যেতে চাইবে না। এই বাজার দখল করতে পারলে মালিকদের পাশাপাশি দেশেরও লাভ হবে।

শনিবার, ১৬ আগস্ট, রাজধানীর শহীদ আবু সাইদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক ও বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, অনেক সময় অযথা এবং অনর্থক টেস্ট নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, যেখান তাঁর হেল্পিং হ্যান্ড নামের একটি কর্মী ১৪টি অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে বিরক্ত হয়ে সেই হাসপাতাল ছেড়ে গেছে এবং টেস্ট না করিয়েই সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছে। তিনি দেশজুড়ে এই রকম অনাহুত টেস্ট দেওয়ার সংস্কৃতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান। এছাড়া, নির্দিষ্ট ওষুধ কেনার বাধ্যবাধকতা কেন থাকা উচিত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ডাক্তারদের সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অস্বস্তিকর সম্পর্ক নিয়ে তিনি প্রশ্নবাণ ছুড়ে দেন এবং দায়িত্ব পালনে সততা ও ন্যায় বিচার দাবি করেন।

তিনি আরো বলেছেন, কিছু হাসপাতালে টেস্টের ফলাফল ভুল হওয়ার ঘটনা ঘটে যা রোগীদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। পাশাপাশি নার্সদের প্রতি অবজ্ঞাসূচক আচরণ ও তুচ্ছ বেতনও হাসপাতালের মানহানির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। নার্সদের বেতন মাত্র ১২ হাজার টাকা হওয়ায় তারা মানসম্পন্ন সেবা দিতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েন। মালিকদের কাছে তিনি অনুরোধ করেন, কোটি কোটি টাকার মুনাফার কিছু অংশ নার্সদের ভালো বেতন ও কর্মপরিবেশে ব্যয় করলে সেবার মান উন্নত হবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, বর্তমানে মানুষ আর ভারতে বা থাইল্যান্ডে যাওয়ার প্রতি আগ্রহী নয়। দেশে চিকিৎসা দেওয়ার পূর্ণ সক্ষমতা আমাদের হাসপাতালগুলোতে রয়েছে, যা করোনাকালীন সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মালিকদের সতর্ক করে বলেন, কর্মীদের বেতন বাড়িয়ে সামান্য লাভ কমলেও, সেটি থেকে ফিরে আসা ভালো সেবা তাদের মাধ্যমে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তাই দায়িত্বশীল ও ন্যায্য আচরণ বজায় রেখে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।