জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৩ সালের রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানকে বাদ দিয়ে আমাদের উন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। এই ইতিহাসকে বিকল্প করা বা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।
আজ সকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীর দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের ষোড়শ দিনের আলোচনা শুরুতে তার এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, গত ৫৩ বছরের সংগ্রাম আর গত বছর ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এসবই আমাদের জাতীয় জীবনের ভিত্তি। আমরা এই প্রেক্ষাপট ভুলতে পারি না। প্রতিদিনের আলোচনার শুরুতেই আমাদের শ্রদ্ধা জানাতে হয় মহান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যাদের ত্যাগ ও আত্মত্যাগের বিনিময়েই আজকের বাংলাদেশ।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ উল্লেখ করেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি আমাদের সাফল্য ও ব্যর্থতার ঊর্ধ্বে আছে। লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্ত ঝরিয়া অর্জিত এই রাষ্ট্রের পথযাত্রা অগ্রহণযোগ্য। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত রেখেই আমরা ফ্যাসিবাদের আঁধারে পতিত হয়েছিলাম, তা থেকে রাজনীতি ও জাতির সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ফিরে এসেছি। এটাই আমাদের জাতীয় সনদের মূল ভিত্তি।
তিনি দ্রুত রাষ্ট্রীয় সনদ প্রস্তুতির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যদি আমরা ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে চাই, তবে আমাদের হাতে মাত্র ১০ দিন সময় রয়েছে। উল্লিখিত সময়সীমার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—তবে কিছু বিষয়ে পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করা যেতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকা ছাড়া অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়।
তারা যেহেতু প্রথম থেকেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ব্যবস্থাটি বজায় রেখেছে, তাই কেউ যদি দ্বিমত পোষণ করেন, সেটিও জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠনের বিষয়ে কমিশন আগামী দুই দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে।
গতকাল তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ক আলোচনা থেকে পাওয়া অমীমাংসিত বিষয়ে আজ পুনরায় আলোচনা শুরু হবে। কমিশন আশা করছে, প্রস্তাবিত সংশোধিত পয়েন্টগুলিতে অধিকাংশ সদস্য একমত, যদিও কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে বিষয়গুলো মীমাংসা করার অনুরোধ করেন।
সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ড. আইয়ুব মিয়া।
আজকের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ মোট ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আশা প্রকাশ করেছেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিক ও সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে দ্রুত ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হবে, যা দেশের গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।