কোরবানি ঈদের পর বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম কিছুটা কমেছে, যা ক্রেতাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির সংবাদ। তবে চালের বাজারে উল্টো দিক দেখা গেছে—দামের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সময়ে সবজির দাম প্রায় আগের অবস্থায় রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার পরিদর্শনে এই পরিস্থিতির চিত্তাকর্ষক ছবি দেখতে পাওয়া গেছে।
বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদের আগে ও পরে চালের দাম ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। খুচরায় মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে সরু চালের মধ্যে জিরাশাইলের দাম ৭৪ থেকে ৭৮ টাকা, মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮০ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী নিজাম জানান, ঈদের পর চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিল মালিকরা ধানের দাম বৃদ্ধির জন্য এই দাম বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন এবং তারা ভবিষ্যতেও চালের মূল্য বাড়তে পারে বলছেন।
অলিগলির ছোট মুদি দোকানগুলোতেও চালের দাম কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে। বংশাল এলাকার মুদি দোকানদার মজিদ মিয়া বলছেন, ছোট দোকানের ক্ষেত্রে বাকির পরিমাণ বেশি এবং তাই তারা ইনভেস্টমেন্টের কারণে দাম কিছুটা বাড়িয়ে রাখেন।
যদিও চালের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মাঝে কিছুটা অস্বস্তি দেখা গেলেও মুরগি, ডিম ও সবজির দাম কমায় বাজারে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। মুদি পণ্যের দামেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। পেঁয়াজ, আলু ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীও কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি কেজিতে কমে ১৫০ টাকায় নামেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। ডিমের দামও প্রতি ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় নেমে এসেছে। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, ঈদের পর ক্রেতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় দাম কমেছে।
কয়েকজন ক্রেতা জানান, অনেক পরিবারেই এখনো কোরবানির মাংস রয়েছে, যার ফলে ডিম ও মুরগির চাহিদা কম। তবে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, কিছুদিন পর যখন মাংসের মজুদ শেষ হবে, তখন মুরগির দাম আবার বাড়তে পারে।
পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার ও নয়াবাজারে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দামও কিছুটা কমে বর্তমানে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মাছের বাজারে বিশেষ পরিবর্তন না থাকলেও বড় ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম তুলনামূলক বেশি রয়েছে।
সবজির বাজারেও ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। পুঁইশাক, বেগুন, পেঁপে, চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও মিষ্টি কুমড়ার মতো সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা ঈদের আগে প্রায় ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি ছিল। বড় বাজারের তুলনায় ভ্রাম্যমাণ দোকানে এইসবসবজির দাম কিছুটা কম দেখা গেছে।
সর্বোপরি, ঈদের পর বাজারে মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও, চালের মূল্য বৃদ্ধি ক্রেতাদের জন্য নতুন একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকায় বাজারে সামগ্রিকভাবে মিশ্র অনুভূতি বিরাজ করছে।