রাজবাড়ীতে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যদিও ধানের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার কারণে কৃষকরা বাজার থেকে ধানের ভালো দাম না পেয়ে বিদ্যমান লোকসানের কারণে চিন্তিত। তবে ধানের খড় বিক্রি থেকে তারা নতুন আয়ের পথ খুঁজে পেয়েছেন। কৃষি বিভাগ জানায়, রাজবাড়ীতে ধানের খড়ের বার্ষিক বিক্রয় মূল্য প্রায় তিনশ কোটি টাকার কাছাকাছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজবাড়ীতে মোট ৬৯ হাজার ১১৭ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হয়েছে, যার মধ্যে ১২ হাজার ৮৯২ হেক্টর বোরো, ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর আউশ, এবং ৫৩ হাজার ৬০ হেক্টর রোপা আমন। এ সুবাদে মোট ২ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।
বর্তমানে রাজবাড়ীর বাজারে ধানের দাম প্রতি মন ১১ শত থেকে ১৭ শত টাকার মধ্যে তরঙ্গায়মান। আর ধানের খড়ের বিক্রি প্রতি বিঘায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায় হচ্ছে। রাজবাড়ীর মোট ধান উৎপাদনের জমি বিঘায় হিসেব করলে দাঁড়ায় প্রায় ৫ লাখ ১৮ হাজার ৪১৫ বিঘা, যার খড়ের বাজার মূল্য প্রায় ২৬০ কোটি টাকা বলে কৃষি বিভাগ উল্লেখ করেছে।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর বিভিন্ন ধানক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটা শেষ হলেও এখন ধানের খড় শুকানো, বিক্রি এবং মজুদ করণের প্রস্তুতি চলছে। গোয়ালন্দ উপজেলার চর কর্নেশনা এলাকার কৃষক আমজাদ মোল্লা জানালেন, সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হওয়ায় ধান চাষে খরচ অনেক বেড়ে গেছে, আর বাজার মূল্য কম হওয়ায় ধান বিক্রি থেকে তারা লোকসানে পড়ছেন। তাই তাঁরা ধানের ক্ষেত থেকে খড় বিক্রি করে উপার্জন করার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে এক বিঘা জমির কাঁচা খড় বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকা এবং শুকনো খড় বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকায়, যা কিনে নিচ্ছেন জেলার খামারিরা।
অন্য কৃষক শামিম হোসেন বলেন, ধানের উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়েন। তবে গত কয়েক বছরে জেলার খামারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধানের খড়ের চাহিদাও বেড়েছে, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক বিষয়।
খলিলুর রহমান জানান, ধান কাটার জন্য এক বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা শ্রমিক খরচ হয়, যা খড় বিক্রি করে উদ্ধার করা সম্ভব। ফলে কৃষকরা ধানের যত্ন নিতে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়াও খড় শুকিয়ে মজুদ করলে বর্ষার সময় দাম আরও বৃদ্ধি পায়, যেখানে একটি খড়ের স্তূপের দাম ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত থাকে।
জেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে খামারিরা কাঁচা খড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গরুদের খাবার হিসেবে। খামারি স্বপন দাস জানান, রাজবাড়ীতে দিনে দিনে খামারির সংখ্যা বাড়ছে। ধানের খড় কাটার পর তা টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয়। এই মৌসুমে তারা ২০ লক্ষ টাকার বেশি খড় সংগ্রহ করবেন, যা পুরো বছর গরু পালন কাজে ব্যবহৃত হবে। ঈদুল আযহার সময়ে গরু বিক্রিতে এর প্রভাব পড়বে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেন, রাজবাড়ীতে প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে, যা থেকে বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান এবং সমপরিমাণ খড় উৎপাদিত হয়। ধানের খড় বিক্রি থেকে রাজবাড়ীর কৃষকদের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ শ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছেছে।