ঢাকা | মঙ্গলবার | ২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রাজবাড়ীতে ধানের খড় বিক্রিতে কৃষকের বার্ষিক আয় তিনশ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই

রাজবাড়ীতে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। যদিও ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা দূর্বল দামের কারণে লোকসানে পড়েছেন। তবু ধানের খড় বিক্রি থেকে জয়জয়কারের আশা রাখতে শুরু করেছেন রাজবাড়ীর কৃষকরা। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, রাজবাড়ীতে প্রতিবছর ধানের খড় বিক্রি হয় প্রায় তিনশ কোটি টাকার বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর তথ্য অনুযায়ী, এ বছর রাজবাড়ীতে মোট ৬৯ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বোরোর জমি ১২ হাজার ৮৯২ হেক্টর, আউশ ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর এবং রোপা আমন ৫৩ হাজার ৬০ হেক্টর। এই ফসল থেকে প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ হয়েছে।

স্থিতি এমন যে, বর্তমানে রাজবাড়ীর বাজারে ধানের দাম প্রতি মন ১১ থেকে ১৭ শত টাকা পর্যন্ত উঠানামা করছে। আর ধানের খড় বিক্রি হয় বিঘা প্রতি ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়। এইভাবে রাজবাড়ীতে প্রায় ৫ লাখ ১৮ হাজার বিঘা জমির ধানের খড় থেকে খড়ের বাজার মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬০ কোটি টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজবাড়ীর মাঠে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে এবং এখন ধানের খড় শুকানো, বিক্রি ও মজুদ করার কাজ জোরদার রয়েছে। চর কর্নেশনা এলাকার কৃষক আমজাদ মোল্লা বলেন, ‘সারের দাম বেড়ে গেলে খরচও বেড়েছে। ধানের দাম কম হওয়ায় লোকসান হচ্ছে তবে ধানের খড় বিক্রি থেকে মোটা অংকের আয় হচ্ছে। বর্তমানে এক বিঘার খড় কাঁচা অবস্থায় ৩ হাজার, শুকনো খড় বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকায়।’

অন্য কৃষক শামিম হোসেন বলেন, ‘ধান চাষে খরচ বেশি হওয়ায় প্রতি বছর লোকসানে পড়ি। তবে গত দুই বছর ধরে খামারের সংখ্যা বাড়ায় ধানের খড়ের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। খড় বিক্রি করে কৃষকগণ কিছু উপার্জন করতে পারছেন।’

অন্য কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ধান কাটার জন্য প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা শ্রমিকের খরচ হয়। খড় বিক্রি থেকে সেটাই পাওয়া যায়। তাই কৃষকরা ধানের ক্ষেতেই যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছেন। খড় শুকিয়ে বর্ষায় রাখলে চাহিদা ও দাম আরও বাড়ে। তখন এক স্তূপ খড়ের দাম দাঁড়ায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা।’

জেলার বিভিন্ন মাঠ থেকে খামারি সম্প্রতি কাঁচা খড় সংগ্রহ করে যাচ্ছেন। খামারি স্বপন দাস বলেন, ‘রাজবাড়ীতে খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা ধানের খড় কাটার পর তা টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে গরুদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করি। এই মৌসুমে আমরা প্রায় ২০ লাখ টাকার খড় সংগ্রহ করেছি যা সারা বছর গরুদের খাদ্য হিসেবে কাজে লাগবে। ঈদুল আযহার সময় এসব গরু বাজারে বিক্রি করা হয়।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজবাড়ীর জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম রাসুল বলেন, ‘রাজবাড়ীতে ৬৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান উৎপাদিত হয় যা থেকে বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান ও সম পরিমাণ খড় উৎপন্ন হয়। শুধু ধানের খড় বিক্রি থেকে কৃষকরা প্রায় তিনশ কোটি টাকার আয় করেন।’

রাজবাড়ীতে ধানের খড় বিক্রি থেকে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পেয়ে এলাকার অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পরার আশা করছে সংশ্লিষ্ট সবাই।