ঢাকা | রবিবার | ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

রুহুল কবির রিজভীর দাবি: হাসিনার আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ডাকাতদের আক্ষণ

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, স্বল্পবয়সে নৌকায় ভ্রমণের সময় মাঝি তাকে সতর্ক করত, “ওই গ্রাম ডাকাতদের লোকসমাজ।” তিনি বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টি ডাকাতদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছিল। সেই সময় এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পার হওয়া ছিল ভয়ঙ্কর এবং ভীতিকর ব্যাপার।

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাতের প্রথম প্রহরে, রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদলের আয়োজনে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় শহীদ ও আহতদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন ও সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, এই মোমবাতি প্রজ্বলন গণতন্ত্রের পথে একটি শক্ত পদক্ষেপ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রের পথ প্রদর্শক ও অধিকারের সঠিক প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু। আমি আজকের এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে ১৯৫২ এবং ১৯৭১ সালের সেই ফুলে ফুলে ফুটে থাকা দিনগুলো স্মরণ করছি, যখন শান্তির বাতাস বইতে শুরু করেছিল।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, বাঁধা দিলে সব বন্ধ হয়ে যাবে আর আমরা সবকিছু দিয়ে ছাত্রদের স্তব্ধ করে দেব। তবুও সেসব প্রতিবন্ধকতার মাঝেও ছাত্ররা গণতন্ত্রের জন্য অনড় সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, যা তাদের থামাতে পারেনি। আলোক প্রজ্বলনের মাধ্যমে আমরা ৩৬ দিনের কর্মসূচির শুভ সূচনা করেছি।

রিজভী আরও উল্লেখ করেন যে, শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনীর হাতে ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী গুম ও খুন হয়েছে। নব্বই ও আশির দশকে তারা যে কর্মসূচি নিয়েছিল, সেটির ধারাবাহিকতায় এই বছরের গণঅভ্যুত্থানেও তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। এই সংগ্রাম সফল করতে আরো প্রতিবন্ধকতা আসবে, কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বাধাগুলো հաղթিয়ে উঠব।

কার্যক্রমে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমানুল্লাহ বলেন, জুলাই মাসের শুরুতে ছাত্রদলের আয়োজন আরও জোরদার গণআন্দোলনের সূচনা করেছে। জুলাই আন্দোলন এক দিনে হয়নি; হাজার হাজার প্রয়োজন হয়েছিল জীবন উৎসর্গের। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান আসাদের রক্তের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ছিল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সফল হয়েছিল। এখন আমরা খুনি হাসিনা মুক্ত একটি বাংলাদেশ চাই। শহীদ ওয়াসিম ও সাঈদের রক্ত কখনো বৃথা যাবে না।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আল্লাহর রহমতে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে এবং তারেক রহমান বাংলাদেশ পরিচালনায় আসবেন। ইনশাআল্লাহ, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফেরত আসবেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, জুলাই আন্দোলনের সূচনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে হলেও, আন্দোলনের মূল নেতৃত্ব এবং প্রাণবন্ত শক্তি ছিল ছাত্রদল। ছাত্রদল এককভাবে রাজপথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মী হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন এবং শতাধিক নেতা শহীদ হয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগ আমরা চিরদিন স্মরণ করব।

কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, গত পনেরো বছর ধরে দেশের অবস্থা ফ্যাসিবাদের দিকে চলে গিয়েছিল। সেই সময়ে ছাত্রদলসহ জাতীয়তাবাদী দলগুলো সেই দমন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। সেই ফ্যাসিবাদী আমলে তরুণদের মত প্রকাশের অধিকার ছিল না, অথচ এই তরুণরাই এ বছরের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তিশালী চালিকাশক্তি ছিল।

এই কর্মসূচিতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবং ঢাকার চার মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ইউনিটের নেতাকর্মীরা যোগদান করেন।