শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় আবু সাঈদকে স্মরণের জন্য প্রস্তুত বেগম রোকেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়। সারা বছরই নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শহিদদের স্মরণ করে আসছে এই
বিশ্ববিদ্যালয়টি। কিন্তু গত বছরের ১৬ জুলাই ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের
টার্নিং পয়েন্ট।
ওইদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি)
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে শহিদ হন। এই ঘটনার পরপরই সারা
দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
১৬ জুলাই আবু সাঈদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে বেরোবির পক্ষ থেকে ব্যাপক
প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বেরোবিতে ১৬ জুলাই পালিত হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহিদ আবু সাঈদের
শাহাদাতবার্ষিকী ও ‘জুলাই শহিদ দিবস’। ওই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চার উপদেষ্টা। দিনটি ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের
উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন থাকবেন প্রধান অতিথি। এই দিনে
বিশ্ববিদ্যালয়ে যে চার উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন, তারা হলেন— আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক
মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ
নজরুল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ৃ পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং মুক্তিযুদ্ধ
বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই
আজম।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি)
চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক
জোবায়ের এবং ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান।
দিনটি উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে বেরোবি ক্যাম্পাসে ৬২ ঘণ্টার
জন্য বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পড়ুন: জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে বুধবার রাষ্ট্রীয় শোক
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই শহিদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদাতবার্ষিকী
উপলক্ষে ‘জুলাই শহিদ দিবস-২০২৫’ উদযাপনের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও
শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ১৩ জুলাই রবিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১৬ জুলাই
বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ
নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে বেরোবির সকল শিক্ষার্থীকে আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশের জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক,
কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
বেরোবি প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, জুলাই শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে আগত
অতিথিদের নিরাপত্তার স্বার্থে এটা করা হয়েছে, যাতে ক্যাম্পাসে কেউ কোনো ধরনের
শৃঙ্খলা নষ্ট না করতে পারে। ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
সঙ্গে কার্ড থাকলে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না।
বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকাত আলী বলেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদের শাহাদাত
বার্ষিকী পালনে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে চারজন উপদেষ্টা
উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া আরও ২১ জন শহিদ পরিবারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।
গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুরে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরে
পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
করা হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টায় সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
শিক্ষার্থীদের পরদিন ১২টার মধ্যে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়, কিন্তু
ছাত্ররা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে
সংহতি জানিয়ে রংপুরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামেন। এর
ধারাবাহিকতায় ১৯ জুলাই পুলিশ নির্মামভাবে গুলি চালিয়ে ৬ জন সাধারণ পেশাজীবী মানুষকে
হত্যা করে। আন্দোলনের চূড়ান্ত রুপ লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার
পলায়নের মাধ্যমে।
বেরোবি উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, ১৬ জুলাই আবু সাঈদকে স্মরণের জন্য সকল
প্রস্তুতির আয়োজন করা হয়েছে। শুধু এই দিনটি নয় বছরজুড়ে আমরা আবু সাঈদের স্মরণে
নানা কর্মসূচি পালন করে আসছি।