ঢাকা | রবিবার | ২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২রা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সক্ষমতা বাড়াতে এনবিআরের ডিজিটাল রূপান্তর প্রয়োজন: সেমিনারে বক্তারা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যকারিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং দেশের

দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল

প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরের ওপর জোর দিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, আর্থিক

খাতের বিশেষজ্ঞ ও শিল্প উদ্যোক্তারা।

বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীতে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডের (ইসিআরএল) প্রধান

কার্যালয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, ‘এনবিআরের ডিজিটাল রূপান্তর শুধু প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়, বরং এটি

জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।’

অ্যানালগ থেকে ডিজিটাল যাত্রা: যৌক্তিকতা, বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এনবিআরের ডিজিটাল রূপান্তর’ শীর্ষক সেমিনারটিতে দেশীয়

প্রেক্ষাপটে এনবিআরকে আধুনিক ও দক্ষ কর কর্তৃপক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ ও

চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়।

সেমিনারটির সভাপতিত্ব করেন ইসিআরএল চেয়ারম্যান ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ড.

জামালউদ্দিন আহমেদ এবং সঞ্চালনা করেন ইসিআরএলের প্রধান নির্বাহী (সিইও) আরিফুর

রহমান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিক্স

স্কুলের ডিন ড. ওয়ারেসুল করিম। আলোচনায় অংশ নেন অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ডেটা

ওয়্যারহাউজ বিশেষজ্ঞ মিজানুর রহমান, এনএসইউর অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ড. সৈয়দ

মর্তুজা আসিফ এহসান এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ড. জিয়াউল হক আদনান।

মূল প্রবন্ধে ড. জামালউদ্দিন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর ও

ভারতের উদাহরণ অনুসরণ করে বাংলাদেশকেও ধাপে ধাপে ডিজিটাল রূপান্তরের পথে হাঁটতে

হবে। বিশেষ করে দেশের বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাত ও কর ফাঁকির প্রবণতা বিবেচনায় রেখে

একটি কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।’

প্রধান অতিথি ওয়ারেসুল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত আশঙ্কাজনকভাবে

কম, জাতীয় ঋণ বেড়েই চলেছে। আমরা পশ্চিমা দেশের মতো জনসেবা চাই, কিন্তু কর দিতে চাই

না—এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে।’

তিনি বিলাসব্যয় পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ব্যয় কর চালুর প্রস্তাব দেন এবং এনবিআরের

দুর্নীতির অভিজ্ঞতা থেকে একটি ঘুষের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রের মূলনীতি-এনসিসি নিয়ে নতুন প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের

অস্ট্রেলিয়ায় কর্মরত মিজানুর রহমান কর ফাঁকি রোধে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তিগত

কাঠামো উপস্থাপন করেন, যার মধ্যে ছিল বাধ্যতামূলক ই-ফাইলিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট, এআই

প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যাংক ডেটা যাচাই, এনবিআরকে ভূমি রেজিস্ট্রি, কাস্টমস ও

আরজেএসসির সঙ্গে সংযুক্তকরণ এবং নিরাপদ ই-ইনভয়েসিংয়ের জন্য ব্লকচেইন প্রযুক্তির

ব্যবহার। ভারতের জিএসটিএন ব্যবস্থা তার উল্লেখিত উদাহরণগুলোর অন্যতম।

তিনি বলেন, রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বিনিয়োগ বেশি হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি করদাতা

বাড়াবে এবং দুর্নীতি ব্যাপকভাবে কমাবে।

অর্থনীতিবিদ সৈয়দ মর্তুজা বলেন, ‘ডিজিটালাইজেশন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য গেম

চেঞ্জার হতে পারে।’

তবে তিনি এনবিআরের নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার পৃথকীকরণের মতো কাঠামোগত

সংস্কারের ওপর জোর দেন।

জিয়াউল হক কর পদ্ধতি সহজীকরণের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘একটি নিম্ন, সমতল হারে কর চালু

করলে কর প্রদানে উৎসাহ বাড়বে। তিনি এনআইডি বা কর শনাক্তকরণ নম্বরকে (টিআইএন)

সামাজিক নিরাপত্তা নম্বরে রূপান্তর ও দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে

তথ্য-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্তাব দেন।’

সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে বক্তারা বলেন, এনবিআরের ডিজিটাল রূপান্তর কেবল

প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নয়ন নয়, বরং এটি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রয়োজন। এজন্য নেতৃত্বের

সাহস, আইন সংস্কার এবং জাতীয় মনোভাবের পরিবর্তন জরুরি।