ঢাকা | রবিবার | ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সহব curso যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৮

যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় অন্তত ২৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস এই হামলাগুলোকে স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করে চুক্তি মানতে বাধ্য করে। হামাসের এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা গাজায় যুদ্ধবিরতির বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এ জন্য যদি মধ্যস্থতাকারীরা নীরব থাকেন, তবে আরও রক্তক্ষরণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা। এদিকে, ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আহ্বান সত্ত্বেও ত্রাণের বড়ো সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ ইসরায়েলি নীতিনির্ধারকদের অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সংকটে পড়েছেন স্থানীয় জনগণ। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের সময় এখন পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ৬৭,০০০৯৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৭০ হাজার ১৭৯ জন আহত হয়েছেন। নতুন হামলার ফলে আন্তর্জাতিক মহলে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে এবং বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, যদি ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ না হয়, তবে পরিস্থিতি আবারও তীব্র রূপ নিতে পারে। গাজা শহরের পূর্ব আল-জেইতুন এলাকায় কোনও সতর্কতা না দিয়ে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলার ফলে একই পরিবারের ১১ জন নিহত হয়েছেন। গাজার ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এই পরিবারের সদস্যরা বহনকারী গাড়িটি ‘হলুদ রেখা’ পার হওয়ার সময় বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। এই ‘হলুদ রেখা’ হলো একটি সীমানা যার মাধ্যমে গাজার বিভিন্ন এলাকা আলাদা করা হয়েছে এবং যেখানে ইসরায়েলি সেনারা অবস্থান করছে। নিহতের মধ্যে সাত শিশু ও দু’জন নারী রয়েছেন। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর সতর্কতা বা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব ছিল, কিন্তু দখলদাররা এখনও রক্তপিপাসু এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আঘাত হানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১০ অক্টোবর আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়, যার আওতায় প্রথমে গাজার আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা হয়। তবে এই সংঘাতের জন্য এখনো নিহতের সংখ্যা দেড় লাখের ওপরে চলে গেছে—প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্ষতি হচ্ছে। গত বছর নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ইসরায়েল সবসময় আন্তর্জাতিক বিচার থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করছে। যুদ্ধের সময় গাজা ও পশ্চিম তীরে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি আটক করেছে ইসরায়েল, কিন্তু তারা মুক্তির পরে কেমন আছেন বা তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে জনসাধারণের বিবরণ খুবই কম। ব্রিটিশ-ভিত্তিক কাউন্সিল ফর আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (CAABU)-র ডিরেক্টর ক্রিস ডয়েল আল-জাজিরাকে বলেছেন, ইসরায়েলি বন্দিদের ব্যাপারে বিশ্বজনমত ও মিডিয়ায় বেশ ভাবুকতা থাকলেও, ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা ও মুক্তির সময় তাদের কেমনটা হয়, সে বিষয়গুলি অনেকটাই উপেক্ষিত। তিনি বলেন, “তাদের কোথায় রাখা হয়, নির্যাতন বা যৌন নির্যাতনের অভিযোগ থাকলেও এই বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে আড়াল করে রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা অন্যান্য দেশে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এ ধরনের খবর খুব কম দেখানো হয়।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে, ফলে বিচার ব্যবস্থা অনেকটাই অপ্রকাশ্য। গত দুই বছর ধরে চালানো গণহত্যা যুদ্ধের অবসানে মার্কিন সমর্থিত চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ক্ষতি এখনো থেকে গেছে। এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬৭,০০০, আহত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। চলতি বছর আবারও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আবার সহায়তা সরবরাহের উদ্যোগ শুরু করে, এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে দাঁড়ায়। খাদ্য ও জলের সমস্যা সংকট অতীতের তুলনায় ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। বহু মানুষ খাদ্য, পানি বা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকায় মৃত্যুর মুখে পড়েছেন, শিশুসহ অসংখ্য জনের মারা যাওয়ার খবর আসছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর আবারো প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এদিকে, গাজা ও পশ্চিম তীরে আইএসএফ-সহ বহু ফিলিস্তিনি বন্দি আটক হয়েছে, তাদের অবস্থা নিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দৃষ্টি কম। একাধিক আন্তর্জাতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, অনেক বন্দিকে নির্যাতন বা যৌন হয়রানি করা হয়েছে। ব্রিটিশ মিডিয়াগুলো এই বিষয়গুলো নিয়ে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ক্রিস ডয়েল উল্লেখ করেন, “ফিলিস্তিনি বন্দিদের অবস্থা ও মুক্তির সময় তাদের কেমন ছিল, তা কমই জানা যায়, আর এটা খুবই দুঃখজনক। কিছুটা বৈষম্য রয়েছে যেখানে ইসরায়েলি বন্দিদের ব্যাপারে এত বেশি আলোচনা হয়, কিন্তু ফিলিস্তিনি বন্দিদের ব্যাপারে কম হয়।” তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিচারব melody নেই। তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে, অপরাধের জন্য দায়ী পক্ষ নির্ধারণ ও বিচার করা দরকার। এখনো পর্যন্ত জাতিসংঘ বা অন্য কোনও আন্তর্জাতিক আদালত এ বিষয়গুলোতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ইসরায়েলি গণহত্যা ও যুদ্ধের ভয়াবহতা অব্যাহত থাকলেও, বন্ধ হয়নি সংঘাত। গাজা ও আশেপাশে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হয়, যার ফলে মৌলিক পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিস্থিতির তীব্রতা আরও বাড়ছে, যেখানে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত, আহত ও নিহত হচ্ছেন। জাতিসংঘ ও বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে এখন একটাই অনুরোধ—সর্বোচ্চ তৎপরতা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করে যেন এই সংকট দ্রুত সমধান হয়, বেসামরিক জীবন পুনরুদ্ধার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।