সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত নানা ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন। সরকারি ওষুধ পাওয়া ঝামেলার পাশাপাশি ওষুধের জন্য টাকা দাবি, পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠানো, কমিশন বাণিজ্য, হুইলচেয়ারের ব্যাবসা এবং প্রথমে ওষুধ সাপ্লাই না থাকার অজুহাত দিয়ে রোগীদের ওষুধ না দেওয়ার মত নানা অনিয়ম এখানে দেখা যাচ্ছে। ফলে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা নেওয়ায় বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়ছেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই অনিয়মের বিষয়টি ঘন ঘন সামনে আসছে। এমন অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা মেডিসিন বিভাগের ওয়ার্ড বয় হরষিতকে সরকারি ওষুধ বিক্রি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রোগীদের দেওয়ার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
হরষিতের কাছ থেকে সরকারি ওষুধ কিনে ভুক্তভোগী সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া এলাকার মোহাম্মদ আলী জানান, ঈদের পরদিন তার স্ত্রীর ভর্তি অবস্থায় ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিয়ে বলেন, এক ওষুধ হাসপাতালে নেই, বাহির থেকে আনতে হবে। শুরু থেকেই তিনি নিজে ওষুধ নিয়ে আসতেন, কিন্তু একদিন একজন ওয়ার্ড বয় প্রশ্ন করেন, আপনারা ওই ওষুধ কত দামে কিনছেন? তিনি বলেন ৮৫০ টাকা, পরে হরষিত ওই ওষুধ ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন।
মোহাম্মদ আলী আরও জানিয়েছেন, তার স্ত্রীর শরীরে চারটি ওষুধ প্রয়োগে চরম জ্বালা ও জ্বর দেখা দেয়। পরে বোঝা যায়, ওষুধগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল।
সেনা সদস্যদের সামনে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ স্বীকার করে হরষিত বলেন, ছয়-সাত মাস আগে তিনি হাসপাতালে ফেলে রাখা কিছু ওষুধ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করেছেন। হরষিতের নিকট থেকে কেনা ছয়টি ওষুধের মধ্যে দুটির মেয়াদ ইতিমধ্যেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, আব্দুল গফুর নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, এখানে টাকা না দিলে কোনও কাজ হয় না। পরীক্ষা করাতে টাকা দিতে হয়, হুইলচেয়ারে টয়লেটে নেওয়ার জন্যও ১০০ টাকা করে দিতে হয়। সরকারি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি সেবার জন্য টাকা দাবি করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিয়মিত ডিউটি না দেওয়া, গাড়ির গ্যারেজে অতিরিক্ত টাকা আদায় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ও প্রতিবাদ করেছেন। পাশাপাশি হাসপাতালের স্টোর থেকে সরাসরি রোগীর কাছে ওষুধ পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য তদন্তের দাবি তোলেন।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরতে খোদা বলেন, ওষুধ বিক্রির ঘটনা তার জানা নেই। তিনি রোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।