সিরিয়ার উপকূলীয় লাতাকিয়া প্রদেশে কয়েকদিন ধরে বিস্তৃত একটি ভয়াবহ দাবানলের কারণে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশটির কর্তৃপক্ষ গত শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। উপকূলীয় এই অঞ্চলের পাশাপাশি সিরিয়ার অন্যান্য অনেক অংশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রবল বাতাস ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে দমকল বাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে।
দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানানো হয়েছে, লাতাকিয়ার দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল কাফি কায়্যাল বলেন, কাস্তাল মা’আফ এলাকায় ছড়িয়ে পড়া দাবানল আশপাশের একাধিক গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা শীঘ্রই এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।
সিরিয়ার সিভিল ডিফেন্স, যাদের ‘হোয়াইট হেলমেটস’ নামেও অবগত, জানিয়েছে যে ধোঁয়ার বিস্তার উপকূলীয় পর্বতমালার উত্তরাংশ, হামা শহর ও তার আশেপাশ এবং দক্ষিণ ইদলিব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। লাতাকিয়ার গ্রামীণ এলাকায় দাবানলের কারণে বহু বাগানের ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জনগণকে অনুরোধ জানিয়েছে, যদি কেউ আগুন লাগানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহযুক্ত কোনও ঘটনা দেখেন বা জানেন, তাদের অবশ্যই জানাতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খরার তীব্রতা এবং দাবানলের ঘটনার সংখ্যা বেড়েই চলেছে, আর সিরিয়া এই প্রবণতার বাইরে নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি সারা বছর তীব্র তাপপ্রবাহ, কম বৃষ্টিপাত এবং ব্যাপক দাবানলের সম্মুখীন হয়েছে।
গত জুনে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) ঘোষণা করে, গত ৬০ বছরে সিরিয়ার জলবায়ু পরিস্থিতি এতটা খারাপ হয়নি। তারা সতর্ক করেছেন, এই অভূতপূর্ব খরার কারণে দেশটির ১ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে পারে।
দেশটি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা গৃহযুদ্ধের রেশ কাটিয়ে উঠতেও সংগ্রাম করছে, যেখানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের শাসনামলের পরবর্তী রূপান্তর প্রক্রিয়াও এখনও বিদ্যমান।
কায়্যাল আরও উল্লেখ করেন, আগের যুদ্ধ থেকে অবশিষ্ট থাকা মাইন ও অবিস্ফোরিত বিস্ফোরক পদার্থ উদ্ধারকাজ দাবি রাখছে এবং তাই তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। পাশাপাশি তীব্র বাতাস দাবানল দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করছে।
এই সব পরিস্থিতির মধ্যে লাতাকিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য এহেন তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। কর্তৃপক্ষ ও উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে বাসিন্দাদের রক্ষা ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।