ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সম্প্রতি মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের হত্যাসংক্রান্ত দীর্ঘদিন গোপন রাখা কয়েক লাখ পৃষ্ঠার নথি প্রকাশ করেছে। এই নথিতে রয়েছে এফবিআই’র নজরদারি কার্যক্রমের বিস্তারিত বর্ণনা, যা পূর্বে কখনো প্রকাশ পায়নি। এতে আছে সিআইএর গোপন রেকর্ডও। ১৯৭৭ সাল থেকে আদালতের নির্দেশে এই নথিগুলো সাধারণ জনসাধারণের কাছে অপ্রকাশিত ছিল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নথি প্রকাশের ফলে মার্টিন লুথার কিং পরিবারের সদস্যরা ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। কিংয়ের দুই সন্তান, মার্টিন লুথার কিং তৃতীয় ও বার্নিস কিং এক যৌথ বিবৃতিতে অনুরোধ করেছেন, ‘এই নথি যাতে আমাদের বাবার সুনামের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করা হয় তা সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যারা এই দলিল পড়বেন, তারা যেন সহানুভূতি, সংযম ও সম্মানবোধ নিয়ে তা করেন।’
তারা আরও বলেন, ‘বাবার জীবদ্দশায় এফবিআই নেতৃত্বে যে অবৈধ নজরদারি ও মিথ্যা প্রচার চালানো হয়েছিল, তা ছিল হীন এবং মর্যাদাহানিকর। এতে তিনি ব্যক্তি হিসেবে স্বাধীনতা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন।’
তবে পরিবারের মধ্যে মতের ভিন্নতাও দেখা দিয়েছে। কিংয়ের ভাইঝি আলভেদা কিং নথি প্রকাশকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনকে। তিনি বলেছেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তরকে ধন্যবাদ জানাই তাদের স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতির জন্য। আমরা এখনও বাবার মৃত্যুতে শোকাহত, তবে সত্য অবলম্বনের এই উদ্যোগকে আমরা ঐতিহাসিক বলে মনে করি।’
মার্টিন লুথার কিং, যিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা, ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল টেনেসির মেমফিসে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৯ বছর ছিল। অভিযুক্ত জেমস আর্ল রে এ হত্যার দায় স্বীকার করলেও পরে দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন এবং নিজের স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু আদালত তাঁর দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে। রে ১৯৯৮ সালে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।
১৯৯৯ সালে একটি দেওয়ানি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি জুরি রায় দেয় যে, মার্টিন লুথার কিং কোনো একক হত্যাকারীর কাণ্ড নয়, বরং একটি বৃহৎ ষড়যন্ত্রের শিকার।
নথিতে রয়েছে এফবিআই’র অভ্যন্তরীণ মেমো, কিংয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে নজরদারির বিস্তারিত, এবং সিআইএর তদন্ত সংক্রান্ত দলিল। জাতীয় গোয়েন্দা দপ্তর জানিয়েছে, দশক ধরে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধুলোমাখা অবস্থায় থাকা এই নথিগুলো এবারই প্রথম জনসাধারণের সামনে আনা হলো।
নথি প্রকাশ কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, এফবিআই, সিআইএ এবং ন্যাশনাল আর্কাইভস সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পামেলা বন্ডি বলেছেন, ‘দেশের এক মহান নেতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জনগণের জানার অধিকার রয়েছে।’
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচকরা মনে করছেন যে, এই গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য থাকতে পারে। নাগরিক অধিকার নেতৃ রেভারেন্ড আল শার্পটন বলেছেন, ‘জেফ্রি এপস্টেইনের মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই মনোযোগ সরানোর জন্যই এই সময়ে নথিগুলো প্রকাশ করা হলো।’