জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা ও তার দোসররা যে অপরাধ বাংলাদেশে করেছেন—এমন
জঘন্য অপরাধ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীকে হার মানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন
অন্তর্বর্তী সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে, আহত ও নিরস্ত্র মানুষকে
গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা যে অপরাধ
বাংলাদেশে করেছেন, আমার মনে হয় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীও এত জঘন্য অপরাধ
করেনি।’ ‘২৫ মার্চ কালো রাতে হয়েছে। অবশ্যই ২৫ মার্চ কালো রাতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে।
কিন্তু অন্যদেশের বাহিনী করেছে,’ বলেন আসিফ নজরুল।
উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালে লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে এমন কোনো ফুটেজ আমি দেখিনি। একজন গুলি
খেয়েছে, তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে তার বন্ধু, সেই অবস্থায় গুলি করেছে, এমন কোনো ফুটেজ
বা কোনো বর্ণনা আমি কোনো মুক্তিযোদ্ধার মুখে শুনিনি। অন্যরকম নৃশংসতা থাকতে পারে,
কিন্তু এমন নৃশংসতা কখনো শুনিনি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার
বিচার’ বিষয়ক আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের
আয়োজন করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে হতাশ না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল
বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে প্রক্রিয়ায় বিচার এগোচ্ছে, তাতে বর্তমান
সরকারের আমলেই কাঙ্ক্ষিত মামলাগুলোর রায় পাওয়া যাবে, ইনশাল্লাহ।
পড়ুন: বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে গুজব ছড়ানো গুরুতর অপরাধ: আইন উপদেষ্টা
একজন আলোচকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমি বিশ্বাস করি না, পরবর্তীকালে
বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি যেই ক্ষমতায় আসুক, তারা এই বিচারের শৈথিল্য বা গাফিলতি
দেখাবে। কারণ তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে নির্যাতিত। তারা শেখ হাসিনার
সরকারের ফ্যাসিজম আমাদের চেয়ে কম দেখেনি।
তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা এমনভাবে এই বিচারের অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণ রেখে যাব,
কোনো সরকার চাইলেও বিচার থেকে সরতে পারবে না।
আসিফ নজরুল বলেন, অনেক অভিযোগ শুনি, অনেক কিছু শুনি, খুব দুঃখ লাগে মাঝে মাঝে। কষ্ট
লাগলেও শুনব, আবার নিজেও কাজ করব। কিন্তু একটা জিনিস বলতে চাই, আমি যেন আল্লাহর
কাছে জবাবদিহিতাটা করতে পারি।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনে কোনো রকম গাফিলতি কোনো জায়গায় করিনি।
কোনো রকম অন্যায় কোনো জায়গায় করিনি। জীবনে কোনোদিন এত পরিশ্রম করিনি। আর যাই করুন,
এই বিচার নিয়ে আমাদের আন্তরিকতায় বিন্দুমাত্র সন্দেহ রাখবেন না। আমাদের সরকারের
চেষ্টায় ব্যর্থতা নেই। চেষ্টার ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যদি শহীদের পিতা হতাম, আমারও প্রশ্ন থাকত। আপনাদের মতো সন্তান
হারালে আমি আরও বেশি ইমোশনাল হয়ে যেতাম, আরও বেশি অ্যাগ্রেসিভলি সমালোচনা করতাম।
এটা আমাদের মেনে নিতে হবে।’
পড়ুন: অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে: আইন উপদেষ্টা
এত বড় গণহত্যা চালিয়েও আওয়ামী লীগের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই মন্তব্য করে তিনি আরও
বলেন, একটা দল ১৫ বছর শুধু মিথ্যা আর নির্যাতন করে দেশ চালিয়েছে। এখনো তাদের
মিথ্যাচার বিন্দুমাত্র থামেনি। এখনো নির্যাতনের ইচ্ছা বিন্দুমাত্র থামেনি। আপনারা
যখন মহাখুনি শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনতে পান, দেখবেন এখনো তার নির্যাতন করার ইচ্ছা
আছে। এরা কি, বিচারে কোনো রকম গাফিলতি থাকলে, সেটা উন্মোচন করার চেষ্টা করবে না?
আমার তো অনেক দায়িত্ব। এই বিচারকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখতে হবে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের
স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠান শুরুর পর জুলাই আন্দোলনে নিহত ও সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল
অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন
করা হয়।
পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন
ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (বাজেট ও উন্নয়ন) রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে
একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা
রিজওয়ানা হাসান, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, জুলাই আন্দোলনে শহীদ
ইয়ামিনের বাবা মো. মহী উদ্দিন, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর
মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেন
প্রমুখ।