প্রতিটি মানুষেরই ইচ্ছে থাকে সুন্দর ও দীর্ঘায়ু জীবন যাপন করার। কিন্তু আজিমন নেছা, যিনি প্রায় ১৩০ বছর বয়সী, তার জীবন নির্বাসনে অতিমাত্রায় ব্যর্থতা এবং দারিদ্র্যের মিছিলে জর্জরিত। জোড়া শরীরে অসুস্থতা ও জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা এই বৃদ্ধা, ফাটা জামা-কাপড় আর নোংরা মেঝেতে শুয়ে প্রতিদিন মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন নিরব নিস্তব্ধতায়।
পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানায়, তার পিতা পিতল আলী বিয়ে হওয়ার আগেই মারা যান। স্বামী মফেজ উদ্দিনকে বিয়ে কয়েক বছর পর হারান। তাদের একমাত্র সন্তান মইয়েজ উদ্দিনকেও প্রায় চল্লিশ বছর আগে দেখতে পাননি। জীবনে শুধু নাতনি রত্না খাতুন (৬৯) ও নাতি শাহবুদ্দিন আহমেদ (৬৭) সঙ্গে রয়েছেন। কিন্তু চোখের অবস্থা এতটাই দুর্বল যে নিজেই চলাফেরা করতে পারে না রত্না খাতুন; তবুও তাকে দুর্বল দাদিকে দেখাশোনা করতে হয়। দারিদ্র্য আর স্বাস্থ্য সমস্যায় তাদের সংসার এখন এক নিঃসঙ্গ বোঝা।
রত্না খাতুন বলেন, তারা কোনো সরকারি সহায়তা পান না। অন্যের বাড়িতে কাজ করে দিন-রাত যাপন করেও চলতে পারছেন না। নিজের শরীরের দুর্বলতায় তিনি এক অন্তরাত্মার আরাম চান।
স্থানীয়রা জানান, আজিমন নেছার বয়স প্রায় ১৩০ বছরের অনেক বেশি, কিন্তু বয়স্ক ভাতার কার্ড তার হাতে আসেনি। জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা এবং বেশকিছু অনৈতিক কারনে এ ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কার্ড পাওয়ার সুযোগ হরণ ও ভাতার টাকার অপব্যবহারের কথাও শোনা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল জানান, ‘কালো বুড়ি’ নামে পরিচিত আজিমনকে ছোটবেলা থেকে দেখছেন তিনি, এবং তার পরিবারের পুরনো সদস্যরাও একথা স্বীকার করেন। কার্ড তৈরি সাধারন বসে বসে হওয়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। সাংবাদিকরা বিষয়টি সামনে না আনলে হয়তো আজিমন সুবিধাবঞ্চিত হয়ে জীবনশেষ করতেন। এটি সমাজের একটা করুণ দৃষ্টান্ত।
আজিমনের নাতি শাহাবুদ্দিন জানান, ভোটের সময় বেশ কয়েকবার জনপ্রতিনিধিরা সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে গেছেন, কিন্তু ভোটের পর থেকে কারো কোনো খোঁজ খবর নেই।
কাজীপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফুলচাঁদ আলী বিষয়টি জানতে পেরে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং টাকার লেনদেনের তালিকা চেক করেছেন। তিনি জানান, তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে পরিবারের সদস্যদের কোন ফোন নম্বর ব্যবহার ছাড়া। তিনি এই সপ্তাহের মধ্যে ভাতার টাকা সরাসরি নাতনি রত্নার ফোনে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
কাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এত বয়স হবার পরও কার্ড না পাওয়া দুঃখজনক ঘটনা। দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে কার্ড প্রদান ও অন্য সরকারি সুবিধা দেওয়া হবে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ারে হোসেনও জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি আজিমনের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘর মেরামত এবং নগদের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
এই দীর্ঘ জীবনের গল্প শুধু আজিমনের নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে অসংখ্য অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত বৃদ্ধদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। সমাজের সবার উচিত তাদের প্রতি সহানুভূতি ও প্রয়োজনীয় সাহায্য নিশ্চিত করা।