সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল এবং ২০১৮ সালে জারি করা সংশ্লিষ্ট পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আওতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক কর্মসূচি পালন করেন। ‘বাংলা ব্লকেড’ নামক এই আন্দোলনে তাদের সহিত রাজধানী ঢাকা শহর এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে ব্যাপক সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যা শহরকে কার্যত স্তবির করে তোলে।
এই দিনে শুধু ঢাকাই নয়, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, রংপুর, সাভার, সিলেট, দিনাজপুর ও গাজীপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্দোলনের স্ফূরণে উত্তাল হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন এবং পরবর্তী দিন সোমবার (৮ জুলাই) পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে বলেও ঘোষণা দেন।
অভিযানের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামীকাল বেলা সাড়ে তিনটা থেকে ব্লকেড শুরু হবে। এর আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হবেন। যদি কোনো আবাসিক হলে বাধা দেওয়া হয়, আমাদের জানান, আমরা সম্মিলিতভাবে সেই হল ঘেরাও করব।” তিনি আরও জানান, ৮ জুলাই থেকে এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হবে। সব গ্রেডের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে ন্যূনতম কোটা রাখতে হবে এবং সংসদে আইনে কোটা সমন্বয়ের ব্যবস্থা হবে।
নাহিদ ইসলাম কোটাকে ‘নাতিপুতি-পৌষ্য কোটা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা এটিকে অযৌক্তিক মনে করছি। আমাদের দাবি মানা হলে আজকেই আমরা পড়াশোনায় ফেরত যাব।” তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, দাবিহীন পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে এবং ফার্মগেট পর্যন্ত অবরোধ করা হবে।
সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সংঘর্ষের মধ্যবর্তীতেও শিক্ষার্থীরা রাজধানীর আটটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুল ও আগারগাঁওয়ে বড় ধরনের অবরোধ হয়। সন্ধ্যাকালীন সময়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে সমস্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এই দিনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নেন। জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বরিশাল, কুমিল্লা, দিনাজপুর, গোপালগঞ্জ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে শিক্ষার্থীরা সরব হয়ে উঠে। কিছু কিছু স্থানে পুলিশের বাধা ও উত্তেজনা থাকলেও শিক্ষার্থীরা কম সময়ে অবরোধ তুলে নিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিনব সাংস্কৃতিক কর্মসূচির মাধ্যমে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবি জানান। অন্যদিকে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধসহ বাস চলাচলও স্থগিত করা হয়, যা দাবির প্রতি শিক্ষার্থীদের জোরদার প্রতিশ্রুতি নির্দেশ করে।
দিবসব্যাপী রাজধানীসহ সারাদেশে এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও সমর্থন পেয়েছে। এই অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে তারা সরকারের সামনে অনড় দাবি পেশ করেছে এবং কোটা বাতিল নিয়ে কেন্দ্রিয় সরকারের কাছে পুনরায় গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানায়।