ঢাকা | মঙ্গলবার | ২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

৭ জুলাই বাংলা ব্লকেডে স্থবির ঢাকা, কোটা বাতিলের দাবিতে এক দফা কর্মসূচির ঘোষণা

সরকারি চাকরিতে অযৌক্তিক কোটাব্যবস্থা বাতিল এবং ২০১৮ সালে জারি করা কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্র পুনর্স্থাপনের দাবিতে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে সারাদেশে ব্যাপক গণবিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রধান শহরগুলোতে শিক্ষার্থীরা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির আওতায় অংশগ্রহণ করে, যার ফলে ঢাকা শহর পরিপূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে।

প্রতিবাদ কর্মসূচি ঢাকায় সীমাবদ্ধ থাকেনি; রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, রংপুর, সিলেট, দিনাজপুর, গাজীপুরসহ অন্যান্য জেলার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাগুলোতেও শিক্ষার্থীরা জমায়েত হয় এবং সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করে ব্যাপক প্রতিবাদ প্রদর্শন করে। তারা দিনে দিন পুরোপুরি অবস্থান অধিকার কার্যক্রম চালিয়ে যান এবং ৮ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে তিনটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ব্লকেড শুরু হবে। তিনি বলেন, “যদি কোনো আবাসিক হল বা কলেজে বাধা দেওয়া হয়, আমাদের জানালে আমরা সম্মিলিতভাবে তা ঘিরে ধরব।” তিনি দাবি করেন, সব গ্রেডের অযৌক্তিক কোটা বাতিল করে ন্যূনতম কিছু কোটা রাখতে হবে এবং সংসদে আইন পাস করে কোটা সংস্কার করতে হবে।

৭ জুলাই শিক্ষার্থীরা সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রধান সড়ক, যেমন শাহবাগ মোড়, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চানখাঁরপুল এবং আগারগাঁওয় অবরোধ করে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শিক্ষার্থীরা মিছিল করে এবং সকালের মধ্যেই গ্রন্থাগারের সামনে হাজারো ছাত্রছাত্রী একত্রিত হন। বিকালে শাহবাগ মোড় অবরোধের ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও আন্দোলন ব্যাপক ছিল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান ফটকের সামনে থেকে ঢাকার আরিচা মহাসড়ক অবরোধ শুরু হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশ বাধার মুখে তাদের মিছিলের গন্তব্য পরিবর্তন করে বহদ্দারহাট উড়ালসড়ক পর্যন্ত যেতে চেষ্টা করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পথনাটক, কবিতা এবং গান পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ জানান এবং একাডেমিক কার্যক্রম ও বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দাবিতে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধের মাধ্যমে কোটাব্যবস্থার প্রতিবাদ হয়। এতে শহরগুলোর যানজট তীব্র হয় এবং শিক্ষার্থীরা অবরোধ উত্তোলন না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

অবশেষে, সন্ধ্যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে নেতাদের আলোচনার পর স্কুল-কলেজগুলির শিক্ষার্থীরা কিছুটা স্বস্তি পায়। তবে আন্দোলনকারীরা ফের কোটা সংস্কারের দাবিতে কঠোর অবস্থানে থাকার ইঙ্গিত দেন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষার্থীরা কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনতে তাদের অটল সংকল্প প্রকাশ করেছে।