বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন শনিবার (৯ আগস্ট ২০২৫) বলেন, যারা আগামী দিনে ক্ষমতায় এসে ফ্যাসিস্ট ও স্বৈরশাসক আচরণ করবে, তাদের অবস্থা শেখ হাসিনার মতোই হবে। তিনি এই বক্তব্য দেন দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এবং শহীদ পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির মতো উপস্থিত থেকে। তিনি আরও বলেন, গত সাড়ে পনেরো বছর ধরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ফাঁসির দণ্ড ভোগ করেছেন এবং সাংবাদিকগণ আন্দোলনে অবিচ্ছিন্নভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। বিএনপি সমর্থক কোনো পত্রিকা পনেরো বছর ধরে সরকারি বিজ্ঞাপন পাননি, কিন্তু এবারে সব পত্রিকাই বিজ্ঞাপন পেয়েছে, যা ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত। তিনি সাংবাদিক সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোকে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। আলোচনা অনুষ্ঠানে বিএফইউজে’র সহকারি মহাসচিব ড. সাদেকুল ইসলাম স্বপন, দপ্তর সম্পাদক আবু বকর এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। খুরশিদ আলম বলেন, গত ১৬ বছরে ৬৬ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন, সর্বশেষ গাজীপুরের আসাদুজ্জামান শাহিন। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যতক্ষণ রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে থাকেন, ততক্ষণ ভালো, কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলে শত্রু হয়ে দাঁড়ান। সাংবাদিক কারো বন্ধু নন, তারা সত্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলাল বলেন, জুলাই বিপ্লব চূড়ান্ত নয়, আরও বিপ্লব আসবে। সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে লড়াই করতে হবে। তিনি বলেন, দিনাজপুরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে জেলা দীর্ঘ অগ্রগতি করবে। এছাড়া অন্যান্য বক্তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক নেতাদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তারা বলেন, বিভাজন সৃষ্টি কারীদের কোনো অবস্থাতেই আশ্রয় দেওয়া যাবে না। জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনাও সংরক্ষণ করতে হবে এবং সকলকে মিলেমিশে চলতে হবে। বক্তারা সাংবাদিক পেশাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং নিরস্ত্র মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গকারী হিসেবে বর্ণনা করেন। যারা রাষ্ট্রের স্বৈরাচারী শাসন হত্যা করেছে, তাদের বিচার না হওয়ায় সাংবাদিকরা জীবন দিতে হচ্ছে। স্বৈরাচার যতদিন থাকবে, সাংবাদিকদের তৎপরতা ততদিন অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন তারা। এছাড়াও, বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে জেলে রেখে মানসিক নির্যাতনের ঘটনাকে ‘ফ্যাসিস্ট’ শাসকদের পতনের প্রেক্ষাপট হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সাংবাদিকদের সহযোগিতা ও সুরক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। বক্তারা স্মরণ করেন, যে সন্তানেরা মোবাইলে আসক্ত ছিল, তারাই সেই ছাত্রসমাজকে মুক্ত করেছে এবং তারা আমাদের স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ মিলেমিশে জুলাই বিপ্লবকে সফল করেছে। তারেক রহমানের কথাও তুলে ধরা হয়, যেখানে তিনি সাংবাদিকদের সন্মানজনক জীবনযাত্রার দাবি করেন। সম্মানিত অতিথিদের হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন দুলাল, সিনিয়র সহসভাপতি মো: মোকাররম হোসেন, সহ-সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম, দিনাজপুর চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি শামিম কবির, শহর জামায়াতের আমীর সিরাজুস সালেহীন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দিনাজপুর শহর শাখার সভাপতি মোশফিকুর রহমান, এনসিপি শ্রমিক উইং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রেজাউল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক একরামুল হক আবির এবং শহীদ রবিউল ইসলাম রাহুলের পিতা মুসলেম উদ্দিন। আলোচনা শেষে শহীদ রবিউল ইসলাম রাহুলের পিতাকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয় এবং অন্যান্য উপস্থিত অতিথিদের মাঝে সম্মাননা স্মারক বিতরণ করা হয়।
