ঢাকা | বুধবার | ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

জাতীয় ঐক্য কমিশনের তিনটি মূল সংস্কার ইস্যুতে মতপার্থক্য অব্যাহত

জাতীয় ঐক্য কমিশন এখনও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ইস্যুতে চূড়ান্ত ঐক্যে পৌঁছাতে পারে নি। এই তিনটি ইস্যু হলো: নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগ প্রক্রিয়া, জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন এবং নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন পদ্ধতি।

বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি ও জামায়াত প্রায় অভিন্ন প্রস্তাব দিলেও, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দলের ভিন্নমতের কারণে এই বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই ১৯টি সাংবিধানিক সংস্কার বিষয়ে একটি জাতীয় রিফর্ম চার্টার চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন, কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংলাপ ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বিষয়গুলোর মধ্যে এই তিনটি সমস্যাজনক এবং দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে সম্মতি বিলম্বিত হচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রক্রিয়া নিয়ে বিএনপি প্রথমে পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল, জামায়াত তিনটি। তবে সাম্প্রতিক সংশোধিত প্রস্তাবে পার্থক্য অনেকটাই কমেছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, চার সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে, যাদের মধ্যে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার। এই কমিটি ১০ সদস্যের একটি বৃহত্তর দলের মধ্য থেকে আলোচনা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচিত করবে। মতৈক্য না হলে ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করা হবে এবং রাষ্ট্রপতিকে দায়িত্ব দেয়ার ধারা বাদ দেয়া হবে।

জামায়াতের পক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটিতে জাতীয় সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন সদস্য থাকবে এবং তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যদের থেকে প্রার্থী মনোনয়ন পদ্ধতি প্রস্তাব করেছে।

তবে এনসিপিসহ কয়েকটি দল রাষ্ট্রপতির বিকল্প নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে এবং তারা র‌্যাংকড চয়েস ভোটিং পদ্ধতির পক্ষে, যা নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বাছাইয়ে সহায়ক হবে।

উচ্চকক্ষ গঠন ও সংরক্ষিত নারী আসন বিষয়ে প্রায় সব দল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের পক্ষে, যেখানে ১০০টি আসন হবে উচ্চকক্ষে এবং ৪০০টি নিম্নকক্ষে। সংরক্ষিত নারী আসনও ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করার প্রস্তাব অনুমোদিত হলেও, নির্বাচনী পদ্ধতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। জামায়াত পিআর পদ্ধতিতে ভোটদান চাইলেও বিএনপি চাইছে নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যার অনুপাতে নির্বাচন হোক।

জাতীয় ঐক্য কমিশন আশা করে অচলাবস্থা কাটিয়ে শীঘ্রই ঐক্যবদ্ধ সংস্কার প্রস্তাব প্রকাশ করতে পারবে, যা দেশের গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ও উন্নয়নে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।