সন্ত্রাসীরা যে কোনো ধরণের অস্ত্র বের করলে গুলি নির্দেশ দেওয়ার চট্টগ্রাম
মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের গোপন ওয়্যারলেস বার্তা সামাজিক
যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এতে বিব্রত হয়েছেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা। অভ্যন্তরীণ বার্তাটি কারা ফাঁস করেছে
তা শনাক্তে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে দেওয়া জরুরি বার্তায় কমিশনার বলেন, পুলিশের সামনে কেউ অস্ত্র
বের করলে তাত্ক্ষণিকভাবে গুলি করতে হবে, সেটা আগ্নেয়াস্ত্র হোক বা ধারালো অস্ত্র।
“হয় মাথায়, নয়তো বুকে, নয়তো পিঠে, সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে
হবে।”
গত ১৪ আগস্ট রাতে নগরীর বন্দর থানার সল্টগোলা এলাকায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মীরা
মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দর থানার এসআই
আবু সাঈদ রানাকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার
করে।
ঘটনার পর গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ওয়্যারলেসে সিএমপি কমিশনার কঠোর নির্দেশ দেন —
অপরাধীরা অস্ত্র বের করলে গুলি চালাতে হবে। “শুধু রবার বুলেট নয়, প্রতিটি টহল ও
মোবাইল টিমকে আগ্নেয়াস্ত্র ও লাইভ এম্যুনিশন সঙ্গে রাখতে হবে” বলেও নির্দেশ দেন
তিনি। তার এই বক্তব্য ভিডিও করে এক কর্মকর্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
ফাঁস হওয়া ৩ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, কোনো ভবনের ভেতর থেকে ওয়াকিটকির
মাধ্যমে কমিশনারের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।
সিএমপি সূত্র জানায়, ভিডিওতে দেখা টাইলস মোড়ানো ফ্লোর ও অন্যান্য ক্লু বিশ্লেষণ করে
ফাঁসকারীদের খুঁজছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দা সোর্সও ব্যবহার করা হচ্ছে।
কর্মকর্তাদের ধারণা, কমিশনারের ওপর ক্ষোভ থেকেই সিএমপির ভেতরের কেউ এটি করেছে।
সিএমপি কর্মকর্তাদের মতে, পুলিশের জন্য দেওয়া গোপন বার্তা বাইরে চলে যাওয়া
নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি। একই সঙ্গে এটি বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্যও নেতিবাচক।
যদিও ভিডিও প্রকাশের পর মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়েছেন। এই
বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত
উপ-কমিশনার মাহমুদা বেগম গণমাধ্যমকে বলেন, “এটি আমাদের ইন্টারনাল একটি নির্দেশনা।
এই বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।”
তবে পুলিশ কমিশনারের ওয়্যারলেস বার্তাটিকে পজিটিভ হিসেবে নিয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত
কর্মকর্তারা (ওসি)। তাদের মতে, কমিশনারের এই নির্দেশ পুলিশের মনোবল চাঙ্গা করবে এবং
মাঠে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের ভয়ভীতি দূর হবে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, “কমিশনার স্যারের এই নির্দেশ মাঠে কাজ
করা পুলিশকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এখন আর গুলি চালাতে দ্বিধা থাকবে না।”
এর আগে গত সোমবার গভীর রাতে নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী
সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিলে হামলার শিকার হন বন্দর থানার এসআই আবু সাঈদ রানা।
গুরুতর আহত হওয়ার ওই ঘটনার পরই কমিশনার এই কঠোর নির্দেশ দেন।