ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বর্বর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত একদিনে কমপক্ষে ৭৫ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে গাজা শহরের চারই জনই ছিলেন শিশুরা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি শুক্রবার প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানা গেছে। বলতে গেলে, গাজার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় নির্বিচার বোমা বর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ নিজেকে নিরাপদে রাখতে পালানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু পুরো উপত্যকাজুড়ে সত্যিই কোনও নিরাপদ আশ্রয় নেই। গত ২৩ মাস ধরে এই নির্মম হামলা চলছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ ইতোমধ্যেই গাজাকে ‘আতঙ্কের নগরী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সম্প্রতি তাল আল-হাওয়া এলাকার একটি তাঁবুতে হামলায় এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে তিনজনই শিশু। হামলার ঘটনা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত তাঁবুগুলোর সামনে ফিলিস্তিনিরা ভাঙা মালপত্র সংগ্রহ করছেন। একটি রক্তমাখা গোলাপি রঙের স্যান্ডেলও পাওয়া গেছে ধ্বংসাবশেষের মধ্যে। এএফপি’র কাছে ইসরা আল-বাসুস জানিয়েছেন, ‘আমি ও আমার সন্তানরা তাঁবুতে ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ করে বোমা ফেলল। শরীরে টুকরো এসে লাগল, আমার চার সন্তানের মধ্যে কেউই আতঙ্কে চিৎকার করতে শুরু করল।’ গাজা শহরের জেইতুন, সাবরা, তুফাহ, নাসর, ও শুজাইয়া এলাকায় ভয়ঙ্কর বোমা বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে তুফাহ পাড়া সহ এতদ্দিনে অন্তত আটজন নিহত ও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন, বলে জানিয়েছেন সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল। শুজাইয়ায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন, আর জেইতুনের ধ্বংসস্তূপে আল-ঘাফ পরিবারের তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিরাপত্তার জন্য পালাচ্ছেন, তবে যেখানে যাচ্ছেন সেটিও নিরাপদ নয়। সেখানে ইসরায়েলি বিমান ও গোলাবর্ষণ থামছে না। ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার যোগাযোগ কর্মকর্তা টেস ইনগ্রামে সতর্ক করে বলেছেন, প্রায় এক লাখ মানুষ এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে আটকা পড়েছেন, যেখানে পালানো, ভয় ও মৃত্যুর ছায়া রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারই গাজায় নিহত হয়েছে ৪৪ জন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, বর্তমানে গাজা শহরের প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা এবং আগামী দিনগুলোতে অভিযান আরও জোরদার করবে। আল জাজিরার স্যাটেলাইট ছবি অনুযায়ী, অন্তত ৫২টি ইসরায়েলি সামরিক যান জেইতুন এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাদের দৃষ্টিতে, গাজা শহরের বহু অংশ তাঁদের দখলে রয়েছে। তারা জানাচ্ছেন, হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান, যেখানে গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়েছে। সেনাদের দাবি, হামাসকে দমন করার জন্য গাজায় চলছে এই বিশাল অভিযান। তবে হামাস নতুন এ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে বলছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সংগঠনটি ঐশ্বরিক শান্তি ও আলোচনার জন্য প্রধান অন্তরায় হিসেবে নেতানিয়াহু সরকারকে দুষছে। অন্যদিকে, মধ্যস্থতাকারীরা নতুন ধরনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিচ্ছেন। হামাস ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, ধাপে ধাপে বন্দি মুক্তি, গাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের জন্য সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। তবে এখনও ইসরায়েল সব বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে চাইছে। গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত থাকায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে, যার মধ্যে অণট বিজয় ও বাড়িঘর ও তাঁবু মধ্যে হামলা চালানো হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৪,২৩১ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৮৩ জন আহত। অনেকেই ক্ষুধা, চিকিৎসা বা সহায়তা চেয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। এরই মধ্যে, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা যাত্রা শুরু করেছে। স্পেনের বার্সেলোনা থেকে রোববার এই জাহাজগুলো রওনা দেয়, তবে খারাপ আবহাওয়ার কারণে ফিরে যেতে হয়। পরে সোমবার আবার যাত্রা শুরু করে। ঝড়ের ধাক্কায় তাদের কিছু মেরামত করে আবার তিউনিসিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় তারা। এই আন্তর্জাতিক উদ্যোগটির লক্ষ্য হলো ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া ও ইসরায়েলি নৌঅবরোধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানো। এই পরিস্থিতি এখনওouw চলছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন।
