ঢাকা | বুধবার | ৩০শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৫ই সফর, ১৪৪৭ হিজরি

শেরপুরে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ষাড়ের মই দৌড় খেলা

ষাড়ের মই দৌড় খেলা বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক মজার ও জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা, যা মূলত কৃষকদের মাঝে ব্যাপক প্রিয়। শেরপুর জেলার কৃষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এই খেলার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও নানা কারণে কিছু সময় ধরে এই খেলা হারিয়ে যেতে বসেছিল, তবে শুষ্ক মৌসুমে শেরপুরের বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে চরশেরপুর নাগপাড়ায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়ে থাকে। সেখানে কৃষক এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ মিলিত হয়ে খেলার আনন্দ উপভোগ করেন।

ষাড়ের মই দৌড় শেরপুর জেলার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় খেলা। শুকনো সময় পরে জেলা জুড়ে এই খেলার আয়োজন নিয়মিতভাবে করা হয়। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এলাকায় বড় উৎসবের আমেজ তৈরি করে। পর ব্যাপক সংখ্যক বয়স্ক থেকে শুরু করে যুবক, শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ এই খেলা দেখতে আসেন। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলা অনেকের কাছে নতুন, যা দেখে তারা আনন্দিত ও মুগ্ধ হন।

১৯ জানুয়ারি শেরপুর সদর উপজেলার চরশেরপুর নাগপাড়া এলাকায় এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে উৎসবের রঙ ছড়িয়ে দেয়। প্রতিযোগিতায় একটি মইয়ে চারটি করে ষাড় থাকে এবং দুটি মই নিয়ে দুই দল এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। অনেক সময় ষাড়গুলো নির্ধারিত দাগের বাইরে চলে গেলে ঐ দল আউট হয়। প্রতিযোগিতায় দুইজন মইয়াল ও তিনজন ধরালের ব্যবস্থাও থাকে। রেফারির বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ষাড়গুলো দৌড় শুরু করে এবং বিজয়ীদের আনন্দে পুরে যায় পুরো এলাকা। আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু কিশোর উল্লাসে মেতে ওঠেন, এ দৃশ্য দেখতে পেয়ে মইয়ালরাও গভীর খুশি হন।

নাগপাড়া এলাকা প্রথমবারের মতো এই খেলার আয়োজন করায় স্থানীয় লোকেরা অত্যন্ত উৎসাহিত। আয়োজনকারীরা বলেন, ‘‘গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য আমরা এ খেলার আয়োজন চালিয়ে যাব।’’. এবছর ৮টি মই দৌড় দল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে, যেখানে জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার চন্দনপুরের হাবু বেপারি দল চ্যাম্পিয়ন হয়।

খেলার শেষে বিজয়ী ও প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সফিকুল ইসলাম এবং উপস্থিত ছিলেন জেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহানুর রহমান সাইম, শিক্ষক আসমত আলী সহ অন্য অনেকেই।

আয়োজক আসমত আলী বলেন, ‘‘এ খেলার প্রতি কৃষক, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ দেখে আমরা প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন অব্যাহত রাখব এবং ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করব।’’