ঢাকা | মঙ্গলবার | ২৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা সফর, ১৪৪৭ হিজরি

দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৩ শতাংশ, ইকোনমিতে উদ্বেগ বাসনা

২০২৪ সালে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমে গেছে। গত বছর বাংলাদেশে এসেছে ১২৭ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। তুলনামূলকভাবে, ২০২৩ সালে নিট এফডিআই ছিল ১৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের প্রকাশিত বিশ্ব বিনিয়োগ রিপোর্টে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি বিনিয়োগের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার, যা দেশের জিডিপির মাত্র ৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার গড় হার ১৩ শতাংশের মধ্যে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। ভারতের এ হার ১৪ শতাংশ এবং ভুটানের মতো ছোট দেশেও এটি ১৭ শতাংশের কাছাকাছি।

বৈদেশিক বিনিয়োগে নতুন প্রকল্পে ঘোষিত অর্থের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা ১৭৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং এটি গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ কম। একই সময়ে, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে বিনিয়োগ মাত্র ৭০ লাখ ডলার হয়েছে, যা প্রায় ৮৫ কোটি টাকা সমান। গত ৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছিল ২০২১ সালে, যা ছিল ৮ কোটি ডলার।

বিশ্বব্যাপী ২০২৪ সালে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ১১ শতাংশ কমে ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগে অবনতি, শিল্পখাতে চাপ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি বিনিয়োগ কমে যাওয়া উদ্বেগের বিষয়। বাণিজ্য সংক্রান্ত উত্তেজনা, নীতিগত অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক বিভাজনের ফলে বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশ কঠিন হয়ে উঠছে।

তবে ডিজিটাল অর্থনীতিকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দেখে সেখানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির অভাব উদ্বেগজনক। ডিজিটাল বিভাজন দূরীকরণ ও ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি সম্ভব, যা সবার জন্য চলমান উন্নয়নের এক শক্তিশালী সূত্র হয়ে উঠতে পারে। প্রতিবেদন সরকারগুলোকে গ্লোবাল ডিজিটাল কমপ্যাক্ট এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও জ্বালানি সংকটের কারণে বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও কিছুটা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করণার চেষ্টা চলছে, তবে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সন্তোষজনক ফলাফল এখনও পাওয়া যায়নি।

বিশ্ব ইনভেস্টমেন্ট রিপোর্ট ২০২৪ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের পর ২০২১ সালে এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছিল ১২.৯৪ শতাংশ, এরপর ২০২২ সালে বেড়ে ৩৪৮ কোটি ডলারে পৌঁছায়। কিন্তু ২০২৩ সালে এটি ১৩.৬৭ শতাংশ কমে ৩০০ কোটি ৪০ লাখ ডলারে নেমে আসে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন ভিয়েতনামে ৩.৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ১০.৬১ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ২৪.৩৫ শতাংশ এফডিআই প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে এফডিআই প্রবাহ ২০২৩ সালে ১৭ শতাংশ বাড়ে এবং এর প্রায় অর্ধেক প্রবাহ কেন্দ্রীভূত হয় কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, বাংলাদেশ, উগান্ডা ও সেনেগালে। তবে সামগ্রিকভাবে উন্নয়ন সহায়তা ও রেমিট্যান্সের তুলনায় এফডিআই প্রবৃদ্ধি পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল অর্থনীতির তুলনায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগ পরিবেশ এখনও বেশ চ্যালেঞ্জিং।