দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল গার্মেন্টস ক্রেতা, বিপণন ও সরবরাহকারী এবং সোর্সিং এক্সিবিশন হিসেবে পরিচিত ইনটেক্স বাংলাদেশের ১৬তম আসর আজ রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-তে শুরু হয়। তিন দিনব্যাপী এই আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল সোর্সিং শোতে ১০টিরও বেশি দেশের ১২৫টির বেশি কোম্পানি অংশগ্রহণ করছে, যা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা, সরবরাহকারী এবং উৎপাদনকারীদের জন্য একটি গতিশীল ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্রুত পরিবর্তিত বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। উন্নতমানের দ্রুত উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
২০২৬ সালের মধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি মূল্য ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর লক্ষ্যে ইনটেক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা, সরবরাহ শৃংখলে বৈচিত্র্য আনা এবং টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পে উদ্ভাবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। এছাড়াও বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলিবিসিসিআই, কেবিসিসিআই ও বিজিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এখন পোশাক খাতে বিশ্ব বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে পাশাপাশি টেকসই ও দামের দিক থেকে প্রতিযোগিতামূলক পোশাক উৎপাদনের একটি বৈশ্বিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। উদ্ভাবন, আইনগত অনুগত্য এবং দক্ষ জনশক্তি নিয়োগে কৌশলগত বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা টেক্সটাইল ও ফ্যাশনে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। ইনটেক্স বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এই লক্ষ্য অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করবে।”
এই বছরের এক্সপোতে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের প্যাভিলিয়নের মধ্যে ভারতের টেক্সপ্রোসিল ও পেডেক্সিল তুলা, মিশ্র সুতা ও টেকসই টেক্সটাইল, চীন টেকনিক্যাল ফ্যাব্রিক ও গার্মেন্টস ট্রিম, দক্ষিণ কোরিয়া পরিবেশবান্ধব পারফরম্যান্স উপকরণ, থাইল্যান্ড ও জাপান প্রিমিয়াম শার্টিং ও বোনা পণ্য তুলে ধরছে। বাংলাদেশি প্রদর্শনকারীরা নিটওয়্যার, ডেনিম এবং ভার্টিক্যালি ইন্টিগ্রেটেড উৎপাদন সমাধান সম্পর্কে তাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি উপস্থাপন করছে।
এক্সপোর মূল্যবোধ আরও বাড়াতে ইন্টারেক্টিভ বিজনেস ফোরাম (আইবিএফ) আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দুইটি সেশনে আলোচনা হবে – প্রথম সেশন হলো ফ্যাশনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ও টেক্সটাইল উৎপাদন উন্নয়ন এবং দ্বিতীয় সেশনটি আলোচনা করবে বৈশ্বিক শুল্ক ও বাণিজ্য পরিবর্তনের প্রেক্ষাপে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রভাব। এই সেশনগুলোতে শিল্পের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করে ব্যবসায়িক স্থিতিস্থাপকতা এবং বৃদ্ধির কৌশল নিয়ে মতবিনিময় করবেন।
প্রদর্শনীতে ছাড়াও, ইনটেক্স বাংলাদেশ ২০২৫-এ রাজধানী ঢাকা ব্যবসায়িক সভা (বি২বি), ভিআইপি নেটওয়ার্কিং এবং ক্রেতা-সরবরাহকারীদের মধ্যে ম্যাচমেকিং সুবিধা প্রদান করছে, যা সোর্সিং ও ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও কার্যকর অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করে।
ওয়ার্ল্ডেক্স ইন্ডিয়ার আয়োজিত এই ইভেন্টটি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিজিবিএ, ইপিবি, আইবিসিসিআই, এলেবিসিসিআই, কেবিসিসিআই এবং বিজিসিসিআইয়ের সমর্থন পেয়েছে।
বাংলাদেশ যখন উদ্ভাবনী ও টেকসই টেক্সটাইল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলছে, ইনটেক্স বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারের সাপ্লাই চেইনের সাথে দেশটিকে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।