ঢাকা | বুধবার | ২৩শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৮শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে ইলিশের দাম

কোরবানির ঈদের পর থেকে চালের দাম ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি, গত দুই সপ্তাহ ধরে সবজির দামও ক্রমবর্ধমান। তবে মুরগি এবং ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।

বর্তমানে ইলিশের ভরা মৌসুম হলেও সাধারণ ক্রেতারা ইলিশের স্বাদ নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রাজধানীর বাজারে এক কেজি ইলিশ মাছের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা, যা প্রায় চার কেজি গরুর মাংসের মূল্যের সমপরিমাণ। ফলে মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে ইলিশ কেনা একপ্রকার অসাধ্যকর হয়ে উঠেছে। অন্যান্য মাছের দামও তুলনামূলকভাবে বেশি রয়েছে।

মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, ইলিশের মৌসুম সত্ত্বেও সরবরাহ কম থাকায় স্বাভাবিকের তুলনায় ইলিশের বাজার কমে গেছে। সাগর ও নদীতে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরতে না পারায় এর দাম বাড়ছে।

অন্যদিকে চালের বাজারেও গত ঈদের পর দাম বেড়ে গেছে। চালকল মালিকরা চালের দাম সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ফলে এখন খুচরায় প্রতি কেজি চালের দাম মানভেদে ২ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। মোটা চাল (বিআর-২৮, পারিজা) প্রতি কেজি ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা, সরু চালের মধ্যে জিরাশাইল ৭৪ থেকে ৮০ টাকা, মিনিকেট ৭৬ থেকে ৮৪ টাকা এবং কাটারিভোগ ৭০ থেকে ৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের এক চাল ব্যবসায়ী জানালেন, নাজিরশাইল বাদে পাইজাম, বিআর-২৮ ও মিনিকেট চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৮ টাকা বাড়িয়েছে। এর আগে ৬৮ টাকায় পাইকারি মিনিকেট চাল কিনতেন ব্যবসায়ী, শুক্রবার তা হয়েছে ৭৬ টাকা।

ছোট বাজার এবং পাড়া-মহल्लার মুদি দোকানগুলোতে চালের দাম আরও বেশি। রামপুরার এক বিক্রেতা জানান, ঈদের পর চালের দাম বেড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বস্তা প্রতি বেশি হয়েছে। দিনাজপুর, নওগাঁ, কুষ্টিয়া সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে।

সবজির বাজারেও দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধন্দুল ও কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ও ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, গাজর ১৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, এবং আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারে একজন ব্যবসায়ী বায়জিদ বলেন, সাম্প্রতিককালে সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়ে পরিবারগুলি কিছুটা চাপের মধ্যে পড়েছে। মিরপুর ৬ নম্বর বাজারের সবজি বিক্রেতা জসিম জানান, বেশ কিছু সবজির মৌসুম শেষ হওয়ার কারণে সরবরাহ কমেছে এবং তাদের দাম বেড়েছে। নতুন মৌসুমের সবজির আগমনের আগ পর্যন্ত এ পরিস্থিতি চলতে পারে।

এদিকে, রাজধানীর বাজারে মুরগির দাম ঈদের পর থেকে কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগির দাম কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিরাজ করছে। ডিমের দামও কমে ১২০ টাকায় নেমেছে, বড় বাজারে ১১৫ টাকায় কেনা যাচ্ছে। তবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, এই দাম ডিম উৎপাদনকারীদের জন্য লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিক্রেতা বিপুল হোসেন জানান, ডিমের লাভের জন্য প্রতি ডজন দাম কেবল মাত্র ১৪০ টাকা হলে খামারি লাভবান হতেন, বর্তমান দাম তাদের জন্য যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করছে।

মুদি পণ্যের দাম মোটামুটি স্থির রয়েছে। তেল, চিনি, ডাল, আটা, ময়দা, সুজি পূর্বের মতোই কেনা যাচ্ছে। পেঁয়াজ, আলু, আদা, রসুনসহ নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে।

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ঈদের পর দেশজুড়ে চাল এবং সবজির দাম বাড়ার প্রভাব সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনুভূত হচ্ছে, যেখানে ইলিশসহ বড় ধরণের মাছ এখনো বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের নাগালের বাইরে রয়েছে।