ঢাকা | মঙ্গলবার | ২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

রাষ্ট্র সংস্কারে সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়: অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ

জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা সববিষয়ে একমত হতে পারবে না বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘‘ভ্রান্ত ধারণা বা বিভ্রান্তি যাতে না সৃষ্টি হয়, এজন্য আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা অব্যহত থাকবে। রাজনীতিকদের বক্তব্য ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’ সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। এই বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

বৈঠকের সভাপতিত্বে ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। কমিশনের প্রধান সদস্যদের মধ্যে আছেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফররাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘দলগুলোর সাথে যখন আলাদাভাবে কথা হয়, তখন স্পষ্ট করে বলেছি যে, কমিশনের যে কোনো প্রস্তাবে সব বিষয়ে একমত হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি বারবার জানিয়েছি, সব বিষয়ে আমরা একমত হবো না।’’

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘‘জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) সংক্রান্ত প্রস্তাব নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আপত্তি জানিয়েছিল। তাই আমরা একটি সংশোধিত প্রস্তাব এনেছি, যা নতুন না, বরং পুরানো প্রস্তাবের সংস্করণ। কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়গুলোতে আমরা রাজনীতিকদের সাথে এগিয়ে যাচ্ছি।’’

তিনি আরও জানান, ‘‘বহুত্ববাদ নিয়ে সবার আপত্তি থাকায় দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণ থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন থেকে চার প্রদেশ করার প্রস্তাব নিয়ে বেশিরভাগ দলের প্রাথমিক সম্মতি না পাওয়ায় বিষয়টি এখন আলোচনা হয়নি।’’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘অনেক বিষয় বাদ দিয়ে এগোনো প্রয়োজন কারণ সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যেখানে রাজনীতিকরা একমত, সেখানে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আলোচনায় অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিছু বিষয়ে চলমান আলোচনা রয়েছে এবং কিছু এখনও আলোচিত হয়নি। প্রাথমিক ঐকমত্য পাওয়া বিষয়গুলো আলোচনায় তোলা হয়নি। রাজনীতিকরা তাদের অবস্থান রেখেছেন, কিন্তু সবাই ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। আমরা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে একমত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

অধ্যাপক বলেন, ‘‘সময়ের সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা রাজনীতিকরা বুঝবেন বলে আশা করছি। এই সপ্তাহে আমরা আশা করেছিলাম এখনই আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ করব, বাকি সময় রাজনীতিকরা সাংগঠনিক কাজ এবং অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগে ব্যস্ত হবেন।’’

তবে, ‘‘বেশিরভাগ দল আরও একদিন বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আগামী সপ্তাহে শহীদ abu Sayeed ও মুগ্ধের শাহাদাতবার্ষিকীসহ কিছু কর্মসূচি থাকলেও, আমরা সময় বের করে আলোচনা অব্যাহত রাখব,’’ যোগ করেন তিনি।

রাজনীতিকদের উদ্দেশ্য করে আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘‘সাংগঠনিক কর্মসূচির পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেও গুরুত্ব দিলে আমরা আমাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারব।’’

অবশেষে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘কমিশন রাজনৈতিক দলের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধিত প্রস্তাব তৈরি করার কাজ করছে। যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা বিভ্রান্তি না হয়, এ ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আন্তরিকতা অব্যাহত রাখব। আপনারা যেসব বক্তব্য বা আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবেন, সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’