‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সবার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত কাজ করো।’ বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের এই কথাটি এখন দলের সাফল্যের একটি সিগনেচার ট্যাগলাইন হিসেবে পরিচিত। দলগত সভা হোক বা ব্যক্তিগত আলোচনায় ঋতুপর্ণা চাকমা, আফেইদাদের সঙ্গে, পিটার বার বার এই কথা স্মরণ করিয়ে দেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে ‘সবাই’ মানে কারা? এবং ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর জানা এখন আমাদের প্রত্যেকের জন্য জরুরি।
পিটার বাটলারের কাছে ‘সবার’ অর্থ বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল, আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে হল দলের সর্বোচ্চ মঙ্গল। তাদের এই আদর্শের প্রতি অটল থাকার কারণেই বাটলার এবং তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল আজ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষত্ব ধরে রেখেছে।
টানা দুটি সাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশ দল এখন সবাইর মুখে মুখে প্রশংসার বিষয়। তবে বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা ঘটেছে। দেশের সীমান্তের বাইরে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বাটলার দ্বিধা করেননি, আর সেটি দ্রুত ফলপ্রসূও হয়েছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার সীমাবদ্ধতাকে পেরিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার মঞ্চে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। পিটার বাটলারের অধীনে এই দলটির ফুটবল খেলা এখন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে।
আগের আসরে বাছাইপর্বে সুযোগ না পাওয়া দলগুলো আজ আন্তর্জাতিক স্তরে দাপটের পরিচয় দিচ্ছে। প্রথম ম্যাচে বাহরাইনকে বড় ব্যবধানে হারানোর পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৭৩ নম্বর র্যাঙ্কিং থাকা স্বাগতিক মিয়ানমারকে পরাজিত করে তারা এশিয়ান কাপে খেলার স্বীকৃতি লাভ করেছে। রক্ষণ, মিডফিল্ড, এবং আক্রমণের প্রতিটি বিভাগ এখন পরবর্তী পর্যায়ের জন্য সুযোগ সুবিধার সঙ্গে প্রস্তুত।
বাফুফের এলিট একাডেমির দায়িত্ব নিয়ে গত বছরের শুরুতে বাংলাদেশে আসেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলেছেন এমন একজন অভিজ্ঞ কোচ পিটার বাটলার। একই বছরে তিনি নারী দলের দায়িত্ব নেন, যেখানে তার আগে আফ্রিকার লাইবেরিয়া এবং বতসোয়ানার দল পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার ইংলিশ মাস্টারক্লাস পদ্ধতির ওপর পুরো দল ভরসা রাখে।
দলে সবাই একই রকম নয়, প্রতিটি খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সে ভিত্তি করে সুযোগ দেয়া হয়। ৯০ মিনিট একশরতে খেলতে না পারলে টিমে থাকার অধিকার নেই বলেই ধারাবাহিকভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কঠোর নিয়ম মেনে চলেন তিনি। বিদ্রোহীদের সঙ্গে আপস না করে বরং দলীয় শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের ওপর জোর দিয়ে এশিয়ার মঞ্চে সফল দল গড়েছেন তিনি।
বাটলার ব্রিটিশ হলেও তার কোচিংয়ে সাধারণ ব্রিটিশ ‘ডিরেক্ট স্টাইল’ ফুটবলের ছাপ নয়, বরং ‘হাই প্রেসিং’ ফুটবল তিনি দলকে শেখিয়েছেন, যা প্রতিপক্ষকে চাপের মধ্যে ফেলে দ্রুত আক্রমণ চালানোর ওপর গুরুত্ব দেয়। দলের খেলোয়াড়রা তরুণ, দক্ষ, ফিজিক্যালি আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং ট্যাকটিক্যাল দিক থেকে উন্নতি করেছে।
ফুটবলের ‘থ্রি এস’ — স্পিড, স্ট্রেংথ এবং স্ট্যামিনা — এই মৌলিক উপাদানগুলো এখন তাদের খেলায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। অবশ্য উন্নতিরও যথেষ্ট সুযোগ রয়ে গেছে, তবে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স বজায় রাখলে ভবিষ্যতে চাইলে বিশ্বকাপেও খেলার স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হবে।
লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দল সদস্য