জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ বলেছেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি ও বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো আপনাদের বক্তব্য এবং আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করা।’
সোমবার (৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের আলোচনা শুরুতেই তিনি এই মন্তব্য করেন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা এই আলোচনায় অংশ নেন।
বৈঠকটির সভাপতিত্ব করেন ড. আলী রিয়াজ। কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা হলেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুঈদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আলী রিয়াজ আরও জানান, ‘দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে যোগাযোগ করার সময় স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, কমিশনের যে কোনো প্রস্তাবে সব বিষয়ে একমত হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। আমি বারবার বলেছি, সব বিষয়ে একমত হবো না।’
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘জাতীয় সাংবিধানিক কমিশন (এনসিসি) নিয়ে প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আপত্তি জানিয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা সংশোধিত একটি প্রস্তাব দিয়েছি যা কাঠামোগত পরিবর্তনের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। তবে বহুত্ববাদ বিষয়টি নিয়ে সবার আপত্তি থাকায় দ্বিতীয় সংশোধিত সংস্করণে তা রাখা হয়নি। এছাড়া জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চার প্রদেশ করার প্রস্তাব অনেক দল আপত্তিকর বলে মনে করে, ফলে তা আলোচনার বাইরে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় বাদ দিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে, কারণ সব বিষয়ে একমত হওয়া সম্ভব নয়। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সম্ভব, সেই দিকেই আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে।’
আলোচনায় কিছু বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে, কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কিছু বিষয় এখনো আলোচিত হয়নি। প্রাথমিকভাবে যেসব বিষয় নিয়ে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো আজকের আলোচনায় আনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব অবস্থান বজায় রাখলেও সবাই ঐকমত্যের দিকে এগিয়ে যেতে সচেষ্ট।
তিনি সময়ের সঙ্কটের কথাও উল্লেখ করে বলেন, ‘এই সপ্তাহে প্রাথমিকভাবে ধারণা ছিল আজকের পর বাকিটা সময় আপনাদের সাংগঠনিক এবং অন্যান্য কাজে ব্যস্ততার জন্য রাখা হবে। কিন্তু বেশিরভাগ দলের অনুরোধে সম্ভবত এ সপ্তাহে আরও একদিন আমরা বৈঠক করবো। আগামী সপ্তাহে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের শাহাদাত বার্ষিকীসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকায় সেসবের মধ্যেও সময় বের করে আলোচনাটি অব্যাহত রাখতে হবে।’
অবশেষে তিনি রাজনীতিবিদদের প্রতি অনুরোধ জানান, ‘আপনাদের সাংগঠনিক কাজের পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকগুলোতেও অংশগ্রহণ করলে আমাদের কাজের অগ্রগতি সহজ হবে। আমরা আলোচনা শেষে সংশোধিত প্রস্তাব তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো, যাতে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা যায় এবং ভুল বোঝাবুঝি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।’