ঢাকা | মঙ্গলবার | ২২শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বাংলাদেশে ইংলিশ মাস্টারক্লাস: পিটার বাটলারের নেতৃত্বে জাতীয় নারী ফুটবল দলের উত্থান

‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক কাজটা করো, যেটি সবার জন্য ভালো।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ পিটার বাটলারের এই কথা দলীয় সভা কিংবা ব্যক্তিগত আলাপে বারবার শোনা যায়। ইংলিশ কোচের এই সিগনেচার বাক্যের অর্থ কী? ‘সবাই’ কারা? এবং ‘সবার জন্য ভালো’ বলতে তিনি ঠিক কী বোঝান? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা সবাইর জন্য জরুরি।

বাটলারের মতে, ‘সবার’ অর্থ বাংলাদেশ দলের সকলে, আর ‘সবার জন্য ভালো’ মানে দলকে সর্বোচ্চ সফলতা দেয়া। হয়তো এই স্পষ্টতা বজায় রাখায় বাটলার ও তার দল বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন দিগন্ত খুলছে।

গত দুইটি সাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল থেমে থাকেনি। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা হওয়ার গর্ব নিয়ে আগামীর আরো বড় মঞ্চে খেলা চাইছে। সেই লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে বেশি ম্যাচ খেলার চেষ্টা করেছে বাটলার। এবং ফলাফল ইতিবাচক।

গত বুধবার, সাফ ছাড়িয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ার মঞ্চে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের পারফরম্যান্স দেখে বলা যায়, ‘বাটলারের বাংলাদেশ’ এখন অন্য এক মর্যাদায়। আগের বারের মতো সহজ ড্র পর্যন্ত হয়নি বাছাইপর্বে, বরং দ্রুত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ বাহরাইন ও মিয়ানমারকে পরাজিত করে এশিয়ান কাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে দল।

দলের প্রতিটি বিভাগ – রক্ষণ, মিডফিল্ড ও আক্রমণ – এখন পরবর্তী স্তরে খেলতে প্রস্তুত। এটা স্পষ্ট যে, এই সাহসী ও অসাধারণ দলকে আলাদা করে ‘বাটলারের বাংলাদেশ’ না বলে উপায় নেই!

বাফুফের এলিট একাডেমির দায়িত্ব নিয়ে ২০২২ সালের শুরুতে বাংলাদেশে এসেছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের এই কোচ। নারী দলের দায়িত্ব পেয়েছেন মে মাসে, এবং তার আগে দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচও পরিচালনা করেছেন। আফ্রিকার লাইবেরিয়া ও বতসোয়ানায় জাতীয় দলের কোচিং করার অভিজ্ঞতা থাকায়, বাংলাদেশ দল নিয়েও তার কাজের পদ্ধতি সফল হয়েছে।

বাটলার দলে কারো জায়গা নিশ্চিত নয় বলে শুরু থেকে কঠোর শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের বার্তা দিয়েছে। যারা তার নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়েছিল তাদের সঙ্গে কোনো আপস হয়নি, আবার প্রয়োজনীয় খেলোয়াড়রাও দলে ফিরে এসেছে। এর ফলে দলটি গড়ে উঠেছে শৃঙ্খলা ও পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে, যা তাদের এশিয়ান মঞ্চে সফল করেছে।

যদিও ব্রিটিশ কোচ হলেও বাংলাদেশ দলের খেলে ব্রিটিশ ফুটবলের প্রচলিত সরল ধাঁচ পাওয়া যায় না। ‘হাই প্রেসিং’, বল দখলে দ্রুত বিল্ডআপ, ‘ওয়ান টু ওয়ান’ পাসিং এবং ‘উইং প্লে’ দিয়ে আক্রমণে আবির্ভাব ঘটায় বাংলাদেশি খেলোয়াড়রা। বাটলারের আসার আগে থেকেই তাদের টেকনিক ছিল ভালো, এখন যোগ হয়েছে ট্যাকটিক্যাল ও ফিজিক্যাল সক্ষমতা।

ফুটবলের ‘থ্রি এস’ – স্পিড, স্ট্রেংথ ও স্ট্যামিনা – এখন বাটলারের দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায়। অবশ্য এখনও উন্নতির সুযোগ রয়েছে, এবং প্রত্যাশা করা যায় তারা আরও উন্নতি করে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যাবে।

লেখক: রাশেদুল ইসলাম, সাবেক ফুটবলার ও জাতীয় দলীয় সদস্য