সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই একটি গণপদযাত্রা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলি তুলে নিতে পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তারা।
১৩ জুলাই শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই কর্মসূচির কথা জানান। একই সঙ্গে ১৪ জুলাই রোববার রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং জেলা শহরগুলোতে শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি জমা দেওয়ারও ঘোষণা দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, আগামীকাল রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা গণপদযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজসহ ঢাকার অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পদযাত্রার মাধ্যমে স্মারকলিপি জমা দেবেন।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, শাহবাগ থানায় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা মামলা করা হয়েছে, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, “যদি পুলিশ মনে করে আমরা ক্ষতি করেছি, তবে সরাসরি আমাদের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে পারেন।”
তবে এ দাবিকে সরকার পক্ষ থেকে সমর্থন না দিয়ে, সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান রাস্তা বন্ধ না করার আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন। একইভাবে তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানিয়েছেন, যেহেতু কোটা সংস্কারের বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন, তাই নির্বাহী বিভাগ এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা দিতে পারবে না।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, যদি আন্দোলনের নামে জনজীবন ব্যাহত হয় বা সড়ক অবরোধ করা হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যথাযথ হলেও সরকার এটি ভিন্ন খাতে নিতে অপকৌশল করছে।
এদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে দিনব্যাপী গণসংযোগ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা গণসংযোগ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন। রাতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আন্দোলনের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ৩৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে ২৪ জনকে সমন্বয়ক ও ১৪ জনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সামনে শনিবার শিক্ষার্থীরা রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুক্ষণ আটকে দেন।
এই আন্দোলনও যাচাই করছে সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ধীরেধীরে দৃঢ়তর হচ্ছে প্রতিবাদ এবং তাদের বলেছেন দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনা করে ভবিষ্যতে আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।