ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রতিবেদনে জানা গেছে, এ পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় ৪ হাজার ৩৭১টি গরু এই ভাইরাসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরুগুলোর শরীরে বড় বড় গুটি, ক্ষত এবং জ্বর দেখা দিয়েছে। এর ফলে দুধ উৎপাদন কমে গেছে, কিছু গরু মারা গেছে এবং গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে, যা কৃষক ও খামারিদের মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
খামারিরা তাদের অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে, কারণ টিকার সরবরাহ অপর্যাপ্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে সরকারি সেবা পৌঁছায় না। লাম্পি স্কিন হলো একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ, যা মূলত মাছি, মশা ও অন্যান্য বাহকদের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। গরুর শরীরে এতে গুটি উঠা, জ্বর, দুর্বলতা, চোখ ও নাক থেকে জল পড়া এবং খাবার নেয়ার অসুবিধা দেখা দেয়।
চরফ্যাশন উপজেলার চর কুকরীমুকরী, চর মানিকা, নজরুল নগর, আড়ালিয়া, ওসমানগঞ্জ ও শশীভূষণসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। নজরুল নগর ইউনিয়নের কৃষক মাহে আলমের দুটি গরুতে জ্বর ও গুটি দেখা দেয়, স্থানীয় ওষুধ সেবনের পরও রোগ থেকে মুক্তি পাননি। অন্য কৃষক খোরশেদ আলম তার খামারে ১০টি গরুর মধ্যে ৩টিতে গুটি লক্ষ করেছেন এবং বর্তমানে গরুগুলোকে উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি জানান, বর্তমান পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো টিকা বাজারে নেই এবং দ্রুত টিকা আনার আবেদন জানিয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলায় মোট প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৩৫০টি গরু রয়েছে, যার একটি বড় অংশ কৃষকদের জীবিকা ও আয়ের প্রধান উৎস। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ের ভেটেরিনারি টিম গঠন, মনিটরিং এবং ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য সহায়তা প্যাকেজ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. রাজন আলী জানিয়েছেন, লাম্পি স্কিন রোগের ভ্যাকসিন বাজারে এখনও আসেনি, তবে সরকার ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। ভ্যাকসিন তৈরি হলে তা দ্রুত সরবরাহ এবং প্রয়োগের মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা হবে। এদিকে গরু মালিকদের সচেতনতা ও প্রাথমিক যত্ন গ্রহণ করতেও নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে।