চার দিনের নিরবচ্ছিন্ন মুষলধারে বৃষ্টির পর নোয়াখালীর আকাশ এখন বেশিরভাগ সময় রোদ পড়ছে। দুই দিন ধরে রোদের মুখ দেখায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি কিছুটা একটু কমেছে। তবে বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর, দুর্গাপুর ও লক্ষীনারায়ণপুরসহ কিছু গ্রামে এখনও পানি বেড়ে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন, ফেনী থেকে পানি ঢুকে এবং বৃষ্টির অভাবে ওই অঞ্চলে জলবৃদ্ধি হয়েছে।
শনিবার (১১ জুলাই) সকাল থেকে নোয়াখালীর সদর, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দারা জানান যে তাদের এলাকায় পানি কমছে খুব ধীরগতিতে। অনেক জায়গায় এখনো বন্যার পানি জমে থাকার কারণে জনজীবনে কষ্ট চলছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় বলেছে, ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার ছয়টি উপজেলায় মোট ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪৬ হাজার ৭০টি পরিবার, মোট ১ লাখ ৯২ হাজার ৫০৩ জন মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় মোট ৪৫টি বসতঘর আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর সুবর্ণচরে একটি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব এবং জল নিষ্কাশনের নালা ও জলাশয়গুলো ভরাট থাকার কারণে শহরবাসী এই দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। অনেকে কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং উদাসীনতাকেই এমন পরিস্থিতির দায়ী করছেন। হালকা বৃষ্টিতেই নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, সেন্ট্রাল রোড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বেশ কিছু এলাকায় রাস্তা এখনো পানিতে ডুবে আছে। আশেপাশের নানা বসতেও জল জমেছে। টানা বৃষ্টির বিরতিতে কয়েক দিনের জন্য সাধারণ মানুষ যেন যেন একটু স্বস্তি পেলেও জলাবদ্ধতা ও বন্যার অবস্থা এখনো আশানুরূপ নয়।
জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে তেমন কোনো বৃষ্টি হয়নি এবং আপাতত ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। তবে সামান্য কিছু গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান জানান, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও ১ হাজার ৮৫০ জন মানুষ এবং ১৭১টি গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসার জন্য মোট ৫১টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বন্যার ভয়াবহতার প্রাথমিক প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে অচিরেই জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি যথেষ্ট উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।