সারা দেশে টানা বৃষ্টি এবং সরবরাহের অভাবে কাঁচামরিচের দাম আশ্চর্যজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় ব্যাপক প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। মেহেরপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, নওগাঁসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এক সপ্তাহের মধ্যে কাঁচামরিচের দাম সাধারণত প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ থেকে ২২৫ টাকায়। গত বছরের একই সময়ে কাঁচামরিচের দাম ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, যা এখন তুলনায় খুবই কম।
মেহেরপুর থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, টানা বৃষ্টির কারণে মরিচের গাছের পাতা শুকিয়ে পড়ায় ফলন ব্যাপকহারে কমে গেছে। কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা বড় দামে কাঁচা মরিচ কিনে বাজারে সরবরাহ কম হওয়ার কারণে খুচরা দামী হয়েছে। গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম জানান, বর্তমানে মরিচ প্রতি কেজি ১৯০ থেকে ২৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে গত বছর একই সময় এটি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো।
গাংনী কাঁচাবাজারের আড়ত মালিক হাফিজুর রহমান বলেন, মাঠের অধিকাংশ মরিচ ক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহ খুবই কম হয়ে গেছে, যার ফলে দাম বেড়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রবীআহ সামসুল আলম জানান, অতিরিক্ত খরা এবং ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলে মরিচগাছের পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। সেচ এবং রোগনাশক ছিটিয়ে এই পরিস্তিতি কিছুটা কমানো যেতে পারে।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলাতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। মাত্র এক সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম তিন গুণ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাটুরিয়ার ইউএনও মো. ইকবাল হোসেন জানান, দাম অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে যাদের অতিরিক্ত মুনাফার আশায় দাম বাড়াচ্ছেন।
নওগাঁ এলাকাও এ থেকে বাদ পড়েনি। এখানে গত এক সপ্তাহে কাঁচামরিচের দাম পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেড়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে মরিচের দাম প্রতি কেজি ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকা পর্যন্ত চলে গেছে, যেখানে এক সপ্তাহ আগেও এটি ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর জেলার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে কাঁচামরিচ চাষ হয়েছে, কিন্তু খরার কারণে ফলন কম হওয়ায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে।
একজন ক্রেতা রায়হান আলম জানান, এক সপ্তাহ আগে তিনি মরিচ কিনেছেন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে, কিন্তু এখন সেটি কিনতে হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি হিসেবে। বাজারের অবস্থা এমন যে, আগামী কয়েক দিনে দাম আরও বাড়তে পারে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও বাজারে সবজির সরবরাহের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যা কর্তৃপক্ষের জন্য বিশেষ নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।