ঢাকা | সোমবার | ২১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৬শে মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বর্ষায় রূপগঞ্জের হাটে ভরপুর দেশি মাছের বাজার

রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল হাটে বর্ষার সময়ে দেশি মাছের আনাগোনা তুঙ্গে উঠেছে। সারা বছর চাষের মাছ খাওয়ার চেয়ে বর্ষাকালে স্থানীয় জলাশয় থেকে শিকারকৃত টাটকা দেশি মাছ খাওয়ার মজা আলাদা বলে মনে করেন শামীম মিয়া। এর ফলে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর দেশি মাছ রূপগঞ্জের বাজারে আগমন ঘটে।

আবুল হোসেন জানান, বর্ষার মৌসুমে নদী, খাল, বিল, হাওর ও বাঁওড়ের মুক্ত জলাশয় থেকে দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড় সহ বিভিন্ন প্রজাতির টাটকা মাছ পাওয়া যায় যা যেকোনো ভোক্তার কাছে খুবই জনপ্রিয়। এসব মাছ গ্রাম থেকে রাজধানীসহ বড় বড় শহরে রফতানি করা হয়।

কায়েতপাড়া বাজারে নীলাস্বরের দোকানে প্রতি কেজি পুঁটির দাম দুই থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। ব্যবসায়ী আলো মিয়া আধা কেজি পুঁটি ৪০০ টাকায় ও বোয়াল মাছ ১ হাজার টাকায় কিনেছেন। বর্ষার এই সময় দেশি মাছের চাহিদা বেড়েছে। গাউছিয়ার কাঁচাবাজার থেকে বেসরকারি চাকরিজীবী মিঠু ১ হাজার ৩০০ টাকায় এক কেজি বেলে মাছ, ১ হাজার টাকায় চিংড়ি ও ২ হাজার ৩০০ টাকায় ইলিশ মাছ কিনেছেন। তিনি বলেন, দাম বেশি হলেও স্বাদ ও টাটকা মাছের জন্য তা মেনে নিতে হয়।

ভুলতা বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে ১২ কেজি ওজনের একটি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছিল ১৯ হাজার ২০০ টাকায়। এছাড়া সেখানে চার কেজি ওজনের চিতল মাছ ও ছয় কেজির আইড় মাছও পাওয়া গেছে, যার দাম যথাক্রমে চার হাজার ও এক হাজার ২০০ টাকার কাছাকাছি। বাচ্চু মিয়া জানান, এ ধরনের বড় মাছ সাধারণত নদী থেকে আসে এবং সব সময় পাওয়া যায় না, তাই দাম বেশি।

মতিন নামের আরেক ব্যবসায়ী সাত কেজি ওজনের বাগাড় মাছ ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, বড় পরিবারের জন্য বড় মাছ কেনা সঠিক। নদীর মাছ সুস্বাদু হওয়ার কারণেও এর দাম চড়া।

বাজারে দেশি মাছের দাম আকার এবং স্থানভেদে ভিন্ন। পুঁটির দাম ৬০০ থেকে ১ হাজার, ট্যাংরা ৬০০ থেকে ১,২০০, বেলে ৫০০ থেকে ১,৩০০, চিংড়ি ১,০০০ থেকে ১,৪০০, আইড় ১,১০০ থেকে ১,২০০ এবং বড় রুই মাছের দাম সর্বোচ্চ ১,৬০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।

মৎস্য কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের মোট মাছ উৎপাদনের ৫৯ শতাংশই চাষের মাছ, আর মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন মাত্র ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ। এসব মুক্ত জলাশয়ের মাছের স্বাদ ভিন্ন এবং এর সরবরাহ কম হওয়ায় এর দাম তুলনামূলক বেশি। বর্ষায় নতুন পানির আগমন ও নাল-বিল-হাওরের সংযোগ ঘটায় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধি পায়।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক খোরশেদ আলম বলেন, বর্ষার শুরু থেকেই ইলিশ ছাড়াও দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, শোল, মাগুরসহ অনেক ছোট মাছ দেখা যায়। মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধি বর্ষার বৃষ্টিতে ত্বরান্বিত হয়।

রূপগঞ্জের মৎস্য অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, মুক্ত জলাশয়ের মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে রূপগঞ্জে মাছের অভয়াশ্রম খুব কম। নদী বা খালের গভীর অংশে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে অভয়াশ্রম তৈরি করে মাছের প্রজাতি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা চলছে। এই ধরনের অভয়াশ্রম বাড়ানোর মাধ্যমে নদ-নালা ও বিল থেকে টাটকা দেশি মাছের প্রাচুর্য ও সরবরাহ বাড়ানো হবে।